রাজীব সেন প্রিন্স : চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই বাবা-মায়ের অনৈতিকতা ও অপরাধ ঢাকার জন্য গর্ভপাত করে নিষ্পাপ-নিরপরাধ নবজাতককে জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় নির্জনস্থানে ফেলে দেয়ার ঘটনা বাড়ছে।
ময়লার ভাগাড়ে, নালা নর্দমায়, ব্যাগে বন্দি অবস্থায় রাস্তার পাশে, ঝোপঝাড়, যানবাহন, শৌচাগার থেকে উদ্ধার হওয়া এসব নবজাতকের বেশিরভাগ থাকে গুরুতর আহত নাহলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
নিষ্পাপ ও নিরপরাধ যেসব শিশু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়, তাদের অনেকেই পরবর্তীতে অমূল্য মানবজীবন লাভ করে। তবে জন্মের পরপরই ঠাঁই হয়না নিজ পরিবারে। মৃত শিশুটি দুনিয়ার সুখ ভোগ করার আগেই নির্মম ও নিষ্ঠুর পরিণতির শিকার হচ্ছে।
মাঝে মধ্যে সংবাদপত্রের পাতা উল্টালে দেখা যায়, ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া নবজাতক কখনো কখনো শিয়াল-কুকুরের খাবারে পরিণত হচ্ছে। তখন শিশুটি বুক ফাটা চিৎকার করে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। শিশুটি বলতে পারে না আমাকে বাঁচাও আমি নষ্ট জীবনের এক অনাগত আগামী, আমি বাঁচতে চাই।
হতভাগ্য শিশু মৃত্যুর সময় পায় না মায়ের বুকের এক ফোটা দুধ বা পানি। কদিন আগে জন্ম নেয়া তেমনি একটি শিশু কাঁদছিলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার গোমদন্ডী স্টেশনের পরে জামালের ভাতঘর সংলগ্ন রেললাইনের পাশে।
ভাগ্য সহায়, শিশু কণ্যাটি বেঁচে ছিলেন। স্থান হয় নিঃসন্তান দম্পতি পরিবারে। তবে তার ঠাঁই কোথায় হলো তা এখনো অজানা।
জানা গেছে, কান্না শুনে রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা শিশুটির পাশে জড়ো হয় কয়েকজন। উদ্ধারও করা হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছে, টাকার বিনিময়ে পটিয়া উপজেলার নিঃসন্তান এক দম্পতির কাছে নবজাতক শিশুটিকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।
শাহীনুল হক নামে এক পথচারী জানায়, ১০ মে (শুক্রবার) রাত ১১ টার দিকে রেললাইনের পাশে কান্না করছিল শিশুটি। পরে আমিসহ অনেক পথচারী গোমদন্ডী স্টেশনের কিছু পরে গিয়ে একটি ভাতঘরের পাশেই একটি নবজাতক শিশুকে দেখতে পাই।
তারা ধারণা করছেন, কয়েকদিন আগে শিশু কণ্যাটি জন্মগ্রহণ করেছেন। লোকলজ্জ্বার ভয়ে অবৈধ মেলামেশায় জন্ম নেওয়া শিশুটিকে রাতের আঁধারে কেউ রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
এরমধ্যে কান্না থামাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি শিশুটিকে কোলে তুলে নেয়। এমন সময় একজন পটিয়া উপজেলার এক নিঃসন্তান দম্পতির জন্য শিশুটিকে নিতে চাই।
অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তি ধারণা করছেন, উদ্ধার হওয়া নবজাতকটিকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে বোয়ালখালী থানার ওসি আছহাব উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে, নবজাতক ফেলে দেওয়ার পর, তাকে মৃত বা জীবিত উদ্ধারের পর নবজাতকের অদৃশ্য জন্মদাত্রী মা নিজের বুকের ধন কীভাবে রাস্তায় ফেলে দিলেন, তার জন্য কি একবারও মন কাঁদে না। এমনটাই মন্তব্য করেছেন অনেকে।
সূত্রমতে দেশে প্রতিবছর এমন কত নবজাতক পাওয়া যায়, তার পরিসংখ্যান নেই কোনো সংস্থা বা মানবাধিকার সংগঠনের কাছে। ফেসবুক, মোবাইলের অপব্যবহার, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে এসব ঘটছে বলে দায়ী করছেন অনেকে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, সমাজে এই নবজাতকদের পরিচয় দিতে পারছে না বলে তারা ফেলে দিচ্ছে, হত্যা করছে। পারিবারিক বন্ধন ঢিলে-ঢালা ও অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়াই মূলত দায়ী। পরিবার সমাজব্যবস্থার মূলভিত্তি।
সামাজিক অস্থিরতায় পারিবারিক কলহের ঘটনা বেড়ে গেছে। বেড়েছে পরিবারের এক সদস্যের হাতে আরেক সদস্যের খুন হওয়ার ঘটনা। স্বামী-স্ত্রীর কলহের কারণে জীবন দিতে হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের। নবজাতকদের রাস্তায় ফেলে দেওয়া সামাজিক মূল্য বোধের অবক্ষয়।
জেএন/রাজীব প্রিন্স