চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল নার্সিং কর্মকর্তাদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আজ ১২ মে রোববার সকালে বেলুন-শান্তির পায়রা উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন, বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা ও কেক কেটে আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল’র ২০৪তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-“আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ : অর্থনৈতিক শক্তি- নার্সিং সেবায় ভিত্তি”।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াজেদ চৌধুরী অভি। এর পর বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পূনঃরায় হাসপাতালে এসে শেষ হয়। র্যালিতে অতিথিবৃন্দরাসহ, নার্সিং সুপারভাইজার, সিনিয়র স্টাফ নার্স, নার্স ও কর্মচারীরা অংশ নেন।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সেবা তত্তাবধায়ক রাশনা দাশের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র স্টাফ নার্স দীপ্তি ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (সার্জারী) ডা. বিজন কুমার নাথ। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. গোলাম মোস্তফা জামাল, হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) ডা. রওশন আরা শিমুল ও সহকারী পরিচালক (নার্সিং) ঝর্ণা দত্ত।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহকারী জেলা হেলথ নার্স সালমা আক্তার, হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স চায়না রানী শীল ও সিনিয়র স্টাফ নার্স মোঃ আবদুল মুকিত।
আলোচনা সভা শেষে কেক কেটে আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল’র ২০৪-তম জন্মবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বেলুন-শান্তির পায়রা উড়িয়ে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস-২০২৪ ও বর্ণাঢ্য র্যালির শুভ উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোঃ মহিউদ্দিন। র্যালিটি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পূনঃরায় হাসপাতালে এসে শেষ হয়। র্যালিতে অতিথিবৃন্দরাসহ সকল নার্সিং সুপারভাইজার ও নার্সিং কর্মকর্তারা অংশ নেন। হাসপাতালের সকল নার্সিং কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবসের আয়োজন করেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (সার্জারী) ডা. বিজন কুমার নাথ বলেন, স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বৃদ্ধি করতে বর্তমান সরকার নার্সিং পেশাকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। নার্সিং পেশ অত্যন্ত মহৎ ও সেবাধর্মী একটি কাজ। এ পেশাকে গুরুত্ব দিয়ে বর্তমান সরকার নার্সদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি রোগীদের সাথে নার্সদের ভালো ব্যবহার, যোগাযোগ ও নিয়মিত উপস্থিতি স্বাস্থ্য বিভাগের সম্মানটুকুও বৃদ্ধি পাবে। কারণ ভালো ব্যবহার পেলে রোগীরা অর্ধেক সুস্থতা অনুভব করে। রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তি দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। এজন্য সবাইকে আরও আন্তরিক হয়ে রোগীদেরকে সেবা দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশে যায়। সে সকল দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবায় রোগীরা সন্তুুষ্ট। সেখানকার হাসপাতালের নার্সরা রোগীদের সাথে ভালো আচরণের মাধ্যমে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সেবা দেয়। আমাদের দেশেও সরকারী-রেসরকারী অনেক নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। সেগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নার্সগণ রোগীদের সেবার উদ্দেশ্যে হাসপাতাল-ক্লিনিকে চাকুরী করছে। তাই উন্নত চিকিৎসা-সেবা নিশ্চিত করতে ডাক্তার-নার্সসহ আমাদেরকে সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। সেবার মানসিকতা ও আন্তরিকতা নিয়ে নার্সদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবসময় রোগীর পাশে থাকতে হবে। রোগীর সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করে নিজের অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে সেবা দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. গোলাম মোস্তফা জামাল বলেন, চিকিৎসকগণ হাসপাতালে রোগীদেও চিকিৎসা দেন আর নার্সগণ রোগীদের যাবতীয় সেবা দিয়ে থাকেন। ফলে আমাদের দেশে বর্তমানে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার অনেকাংশে হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশে বিশ্বমানের নার্স গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের গৃহীত ও বাস্তবায়িত কার্যক্রমসমূহ সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছে। নার্সদের কারণে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে স্বাস্থ্য বিভাগের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। নার্সিং পেশাকে একটি আদর্শ পেশা হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নার্সদের কঠিন পরিশ্রম ও তাদের সেবা ছাড়া কোনো রোগীর সুস্থ হয়ে উঠা কঠিন। আজ সেই মানুষদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার আমাদেরকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। স্বাস্থ্যসেবা জণগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক নার্স নিয়োগ, নতুন পদ সৃজন, বিশেষায়িত নার্স গড়ে তোলা, নার্সিং খাতের নানাবিধ প্রশাসনিক কার্যক্রম গতিশীল করা, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে নার্সিং সেবার মান বৃদ্ধি করাসহ নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা, সমাজ সংস্কারক ও পরিসংখ্যানবিদ মহিয়সী নারী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল’র জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে সমাজের দরিদ্র-অসহায় মানুষের সেবায় নার্সদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
উল্লেখ্য যে, ১৮২০ সালে ১২ মে ইতালির এর আভিজাত পরিবারে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের ১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর জন্মদিনটি ‘ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। ডার্বিশায়া থেকে ১৭ বছর বয়সে লন্ডনে আসেন ফ্লোরেন্স। সেই সময় লন্ডনের হাসপাতালের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কারণে কোনও সেবিকা সে সময় কাজ করতেন না। সে সময় নার্সিং পেশাকে সামাজিকভাবে মর্যাদা দেওয়া হত না। তা সত্তেও নাইটিংগেল লড়াই করেন। তিনি ১৮৫১ সালে নার্সের প্রশিক্ষণ নিতে জার্মানিতে যান। তারপর তিনি নজে ১৮৬০ সালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্থাপন করেন নাইটিংগেল ট্রেনিং স্কুল। তারপর ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে চালু হয় উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ।
এভাবে একে জন সমক্ষে আসতে শুরু করে এই পেশার গুরুত্ব। ভারতেও তাঁরই প্রচেষ্টায় এই পেশার খ্যাতি বাড়তে থাকে। ১৮৮৩ সালে তাঁর এই কাজের জন্য তিনি রয়েল রেডক্রস সম্মান লাভ করেন। একের পর এক সম্মান পান ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল। তারপর ১৮৬০ সালে লন্ডনে বিশ্বে প্রথম তৈরি হয় নার্সিং শেখানোর স্কুল। যে স্কুল নির্মাণে তাঁর ভূমিকা ছিল বিস্তর। যুগ যুগ ধরে সেবিকাদের পরিশ্রম চাক্ষুস করেছেন সকলে।
জেএন/এমআর