রাজীব সেন প্রিন্স : সোমালি জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার এক মাসের মাথায় ২৩ নাবিকসহ কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় এসে পৌছেছে শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন বহুল আলোচিত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।
সোমবার (১৩ মে) বিকাল ৫টার দিকে জাহাজটি কুতুবদিয়ায় এসে পৌছে। পরে সন্ধ্যা ৬টায় জাহাজটি কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে। জাহাজের ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আজ রাতেই নোঙর করা জাহাজ থেকে চুনাপাথর খালাসের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা রয়েছে।
জাহাজটির জেনারেল স্টুয়ার্ড নুরউদ্দিন জানান, জিম্মিদশা থেকে মুক্ত ২৩ নাবিক নিয়ে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ আজ দুপুরে বাংলাদেশের জলসীমায় এবং বিকাল ৫টার দিকে কুতুবদিয়ায় এসে পৌছে। এর ঘন্টা খানেক পরেই কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে এমভি আব্দুল্লাহ।
নাবিকরা তীরে কখন ফিরবে?
জাহাজটি কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করলেও নাবিকদের এখনই তীরে আনা হচ্ছে না। এমনটাই জানিয়েছেন কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকাল ৪টার দিকে আবদুল্লাহ জাহাজ থেকে অপর একটি লাইটার জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরের সদরঘাট কেএসআরএম জেটিতে নিয়ে আসা হবে। এরপর তাদের বরণ করে তীরে নামানো হবে।
কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম জানান, গত ২৮ এপ্রিল দুবাই থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা জাহাজটি বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে অবস্থান করছে।
সেখানে নাবিকদের আরেকটি গ্রুপ পাঠিয়েছে জাহাজটির মালিকপক্ষ। সোমবার বিকেলে নাবিকদের নতুন টিম নিয়ে নগরের সদরঘাট কেএসআরএম জেটি ছেড়েছে লাইটার জাহাজ এমভি জাহান মনি-৩।
ওই জাহাজে করে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত ২৩ নাবিককে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে কুতুবদিয়া থেকে রওনা দেবেন।বিকেলের দিকে সদরঘাটের জেটিতেই আনা হবে। সেখানে কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে নাবিকরা ফিরবে স্বজনদের কাছে।
যে কারণে কুতুবদিয়া চ্যানেলে ভিড়ল এমভি আব্দুল্লাহ:
সরাসরি সদরঘাটে নোঙর না করে কুতুবদিয়া চ্যানেলে কেন নোঙর করা হয়েছে, এমন প্রশ্নে মিজানুল ইসলাম বলেন, এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি এমনিতেই অনেক বড়। তার ওপর জাহাজটিতে ৫৬ হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন চুনাপাথর থাকায় এটির ড্রাফট (পানির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য) বেড়ে এখন চারতলার সমান ১২ মিটারে দাড়ায়। ফলে এ জাহাজটি পণ্য খালাসের আগে বন্দর জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, কুতুবদিয়ায় কিছু মালামাল খালাস শেষে বুধবার (১৫ মে) এমভি আবদুল্লাহ বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছাবে। সেখানে বাকি মালামাল খালাস হবে।
কেমন আছেন জাহাজের নাবিকরা:
কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানালেন, জাহাজের ২৩ নাবিক পুরোপুরি সুস্থ আছেন। তিনি বলেন, এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন চুনাপাথর নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল ভোররাত ৪টার দিকে দেশের পথে রওনা হয়। আজ সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছে।
নাবিকদের বরণে নানান প্রস্তুতি :
সোমালিয়ার জলদস্যুর জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ২৩ নাবিক দেশে ফেরার খবরে তাদের প্রত্যেকের পরিবারে এখন ঈদ উৎসব চলছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে সদরঘাট জেটিতে তাদের বরণ করবেন স্বজনরা। বরণ করে নিতে প্রত্যেকের স্বজনরা করছেন নানা পরিকল্পনা। আয়োজনের কমতি রাখেনি জাহাজ কর্তৃপক্ষও।
কেএসআরএম সূত্র জানিয়েছে, নাবিকদের জেটিতে বরণ করার জন্য কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তারা ফুল দিয়ে বরণ করে নেবেন। নাবিকদের স্বজনরাও জেটিতে উপস্থিত থাকবেন।
উল্লেখ্য : বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে গত ৪ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল।
১৯ মার্চ জাহাজটি এসব পণ্য নিয়ে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছনোর কথা ছিল। এ দিকে মাপুতু বন্দর থেকে রওনা হওয়ার চার দিন পর গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।
এরপর দীর্ঘ ৩৩ দিনের জিম্মিদশা থেকে গত ১৩ এপ্রিল ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হয়। মুক্ত হওয়ার আট দিনের মাথায় গত ২১ এপ্রিল নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ দুবাই পৌঁছে।
জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহিনোঙর থেকে ওই বন্দরের জেটিতে ভিড়ে ২২ এপ্রিল। এরপর ওই বন্দরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা খালাসের পর নতুন ট্রিপের পণ্য (পাথর) লোড করতে পাশ্ববর্তী ইউএইর মিনা সাকার বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় জাহাজটি।
সেখানে ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর নিয়ে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ গত ৩০ এপ্রিল দুবাই মিনা সাকার বন্দর থেকে দেশের পথে রওনা হয়। অবশেষে জাহাজটি আজ সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে।
জেএন/পিআর