চট্টগ্রাম বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণে বিলিয়ন ডলার দিচ্ছে এডি পোর্টস

অর্থনীতি ডেস্ক :

চট্টগ্রাম বন্দরে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ (এডি পোর্টস)।

- Advertisement -

এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ঢাকার হোটেল ওয়েস্টিনে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে স্মারকটি সই হয়।

- Advertisement -google news follower

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফ আল মাজরুই স্মারকে সই করেন।

বহুল প্রতীক্ষিত মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে এর আগে চার সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম ঘুরে গেছে।

- Advertisement -islamibank

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এক হাজার ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের বে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল হলে দেশের মেরিটাইম সেক্টরে একটি মাইলফলক হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। টার্মিনালটি নির্মিত হলে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের জাহাজ সহজেই ভিড়তে পারবে।

তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ১০ লাখ টিইইউ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার এবং ৭০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করতে পারবে বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর দ্য ওয়েস্টিন ঢাকায় এডি পোর্টস, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ), নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং এডি পোর্টসের বাংলাদেশ এজেন্ট সাইফ পাওয়ারটেকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হয়।

চুক্তিটিকে পরিবহন খরচ এবং সময় কমিয়ে দেশের আমদানি ও রপ্তানি দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সিপিএ চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল এর আগে বলেছিলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ টার্মিনালের অর্থায়নের জন্য এডি পোর্টসের প্রাথমিক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

নন-বাইন্ডিং এমওইউ-এর পর এখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে কীভাবে এগোনো যায় তা নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা হালিশহর উপকূল বরাবর আড়াই হাজার একর জমিতে বে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের অধীনে মোট ৪টি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এর মধ্যে আবুধাবি পোর্ট গ্রুপের বিনিয়োগ সহায়তায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড (পূর্বের পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথোরিটি) এবং ডিপি ওয়ার্ল্ড (দুবাইভিত্তিক একটি আমিরাতি বহুজাতিক লজিস্টিক কোম্পানি) উভয়ে দেড় বিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগ করে দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল করবে। লিকুইড কার্গো টার্মিনাল নির্মাণে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ ও তাদের বিদেশি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া বে টার্মিনালের চ্যানেল তৈরিতে বিনিয়োগ করা হবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাধ), ট্রাক টার্মিনালসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বিনিয়োগ হবে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বে টার্মিনাল প্রকল্পের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং দুটি কন্টেইনার টার্মিনালে বার্থের দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৯৫০ মিটার। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস টার্মিনালে বার্থের দৈর্ঘ্য দেড় হাজার মিটার।

মাল্টি পারপাস টার্মিনালের মোট বার্থসংখ্যা ৫টি। টার্মিনালে প্যানামেক্স ক্লাসের কন্টেইনার জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়া, রো রো শিপ ইত্যাদি জাহাজ ভিড়তে পারবে।

দুটি কন্টেইনার টার্মিনালের প্রতিটির বার্থ এরিয়া হবে এক হাজার ২২৫ মিটার করে। কন্টেইনার টার্মিনালে বার্থের সংখ্যা ৪টি করে মোট ৮টি।

আবুধাবি পোর্টের বাংলাদেশি সমন্বয়কারী এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন জানিয়েছেন, আবুধাবি পোর্টের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল গত তিন দিন চট্টগ্রামে অবস্থান করে বে টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জায়গা ঘুরে দেখেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে সকল কমপ্লায়েন্স মেনেছে এডি পোর্টস গ্রুপ। দুই দেশের বন্দর কিভাবে টার্মিনাল পরিচালনা করবে সে বিষয়েও আলোচনা করেছে। টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে আবুধাবি পোর্ট এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

বাংলাদেশ ফ্রোইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘বে টার্মিনাল প্রকল্প আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। সেটি বাস্তবায়ন হতে চলেছে; এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।

টার্মিনালটির কার্যক্রম শুরু হলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি আসবে, বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে সময় ও ব্যয় কমে আসবে।’

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের জাহাজ।

‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জাহাজ ভেড়ানোর ক্ষেত্রে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করতে হবেনা। টার্মিনালটিতে ছয় হাজার কন্টেইনার বহনক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে। বর্তমান বন্দরের জেটিতে প্রায় দুই হাজার কন্টেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজ ঢুকতে পারে,’ খায়রুল আলম আরও বলেন।

জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর ইতোমধ্যেই ৬৬.৮৫ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করেছে এবং তিন কোটি টাকার প্রতীকী মূল্যে ৫০০.৭ একর সরকারি খাস জমি বরাদ্দ পেয়েছে। সম্প্রতি এ বরাদ্দের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে তিন কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বন বিভাগ থেকে ১২৪ একর জমি বন্দোবস্তের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানা দাবি করা ১৮৮ একর বিতর্কিত জমির জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বাকি এক হাজার ৬২০ একর জায়গা সমুদ্র থেকে পুনরুদ্ধার করা হবে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM