প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে ফিরে এসেছিলাম বলেই বঙ্গবন্ধু যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, কিছুটা হলেও সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আজ (শুক্রবার) সকালে আওয়ামী লীগ নেতারা গণভবনে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে বিদেশ যাওয়ার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করেছিলাম আমরা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। কিন্তু সেই ফিরে আসা আর হয়নি।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি জানতাম না যে, আমাকে এত বড় একটা দায়িত্ব দেওয়া হবে। আমি কখনও এটা ভাবতে পারিনি।
‘লন্ডন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুবুর রহমান টেলিফোন করে বললেন আপনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি তাকে বললাম আমি তো আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চাই না, আমাকে কেন করবে?’
১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটির কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেদিন সাধারণ মানুষ সেখানে গিয়েছিল। মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বক্তব্য রাখলাম, সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি যখন যাই তখন কামাল, জামাল, রোজি, খুকি সবাই বিমানবন্দরে ছিল। আমি যখন ফিরে আসলাম হাজার হাজার মানুষ, কিন্তু আমি পেলাম বনানীতে সারি সারি কবর।
তিনি বলেন, ৩২ নম্বরে আমরা মিলাদ পড়তে চাইলাম, আমাকে ঢুকতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। উল্টো বলেছিল বাড়ি দেবে, গাড়ি দেবে, সব দেবে। আমি বলেছিলাম তার কাছ থেকে কিছু নেব না। খুনির কাছ থেকে আমি কিছু নিতে পারি না। আমি যখন দিল্লিতে ছিলাম, সেখানে গিয়ে জিয়াউর রহমান আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল, তার স্ত্রীও দেখা করতে চেয়েছিল, আমি দেখা করিনি। লন্ডনে যখন, তখনও দেখা করতে চেয়েছিল, আমরা দেখা করিনি।
দেশে ফিরে কোথায় উঠবেন, থাকবেন সেটা জানতেন না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু আমার পরার কাপড়চোপড়, দুটো স্যুটকেস ও পুতুলকে (মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) নিয়ে আমি চলে এসেছি। তারপর এ যাত্রা শুরু। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা কর্মী ও দলকে গোছানোর চেষ্টা করেছি।
আবেগাপ্লুত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলবো, আমার সব শক্তি-সাহস মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। যেদিন আমার বাবাকে হত্যা করা হয়..উনিতো কোনোদিন বিশ্বাস করেননি বাঙালি তাকে হত্যা করতে পারবে। আমার মা কখনো জীবন ভিক্ষা চাননি।
১৫ আগস্টের ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এই ঘাতকের দল মনে হচ্ছিল একটি পরিবারকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করবে। শুধু পরিবার না, আমাদের যারা আত্মীয়-স্বজন আছে তাদেরও।
৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার প্রসঙ্গও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সংগ্রাম করলেন সারাটা জীবন, সেই বাংলার মাটিতে, বাঙালির হাতেই তাদের মৃত্যুবরণ করতে হলো। তাও স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিনবছরের মধ্যে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার তো বিচার চাইবার অধিকার ছিল না। মামলা করতে গিয়েছি, মামলা নেবে না, করা যাবে না। কারণ খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে, তাদের হিরো বানানো হয়েছিল।
১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী-এমপি-উপদেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন তারাই অপরাধী হয়ে গেল। যারা বিরোধিতা করেছিল, গণহত্যা করেছিল তারাই ক্ষমতায়। ওই অবস্থায় দেশে ফিরেছিলাম। আমার তো কিছুই ছিল না। একটা বিশ্বাস ছিল দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী। এরপর লড়াই-সংগ্রাম করে এইটুকু বলতে পারি পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।
আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যদি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা না থাকে, দেশপ্রেম না থাকে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় না থাকে, তাহলে সে এগোতে পারে না। আজ আমরা বলতে পারি দেশটাকে বদলাতে পেরেছি। সামনে আরও বদলাতে হবে। কারণ আমার বাবার একটাই স্বপ্ন ছিল দেশটাকে গড়ার। আমাদের পরিকল্পনা সেটাই আছে।
আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত থাকায় করোনাভাইরাস সকল দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দলের প্রত্যেকটা সদস্য জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সমানতালে কাজ করেছে বলেই আমরা এ সাফল্যটা দেখাতে পেরেছি। তাছাড়া কোনোভাবে সম্ভব ছিল না। আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের জনগণের জন্য আত্মত্যাগ অন্য কেউ করে না। আজ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য দল আওয়ামী লীগ। প্রতিবার চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, কী পেলাম, কী পেলাম না সেই চিন্তা করিনি। ভবিষ্যৎ কী, সেই চিন্তাও করি না। চিন্তা করি দেশের মানুষের ভবিষ্যতটা আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলে দিয়ে যাব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
দলীয় নেতাদের তিনি বলেন, এটা মনে রাখবেন একটা দল করা মানে শুধু নেতা হওয়া না, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কী দিয়ে গেলাম… এটাই রাজনৈতিক মানুষের জীবনের বড় কথা। এই কথাটা মাথায় রাখতে পারলে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে।
সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আর যেন যুদ্ধাপরাধী, খুনিরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে এই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।
জেএন/এমআর