এবার এসএসসিতে ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন নিশিতা ধর। মেয়ে ভালো ফল করায় খুশিতে আত্মহারা বাবা-মা। দুশ্চিন্তা এখন সন্তানকে ভালো কলেজে ভর্তি করানো নিয়ে। কখন, কীভাবে আবেদন করলে মেয়ে কাঙ্ক্ষিত কলেজ পাবে, তা নিয়েই সারাক্ষণ উদ্বিগ্ন তারা।
অভিভাবকদের সাথে কথা বলে মনে হল, এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার চেয়েও কি কঠিন নামি কলেজে ভর্তি হওয়া?
নিশিতা ধরের মা অর্পিতা ধর বলেন, মেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে। এখন চিন্তা আরও বেশি। ওর ইচ্ছা চট্টগ্রাম কলেজে পড়বে। যদি চট্টগ্রাম কলেজ না হয় সে ক্ষেত্রে মহসিন কলেজে ভর্তি করাতে চাই।
খোঁজ-খবর নিয়ে যা শুনছি, রেজাল্ট যতই জিপিএ ৫ আসুক, ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া বর্তমান সময়ে অনেক কঠিন।
এদিকে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ৮২৩ জন। চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে মোট পাস করেছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী।
অথচ চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি কলেজে আসন রয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার। সেই হিসাবে সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ফাঁকা থাকবে ৪৬ হাজার ৯১৪টি আসন।
এদিকে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের প্রথম পছন্দে রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরের ৮টি সরকারি কলেজ। এগুলো হলো- চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, সিটি কলেজ, কমার্স কলেজ, মহিলা কলেজ, বাকলিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
এসব কলেজে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আসন রয়েছে ২ হাজার ৭৪০টি, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩ হাজার ৭৭০টি এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য আসন রয়েছে ৩ হাজার ৫৯০টি। মোট আসন সংখ্যা ১০ হাজার ১০০টি।
চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক জাহেদুল হক বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২৮৫টির মতো কলেজে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। মোট আসন সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজারেরও কিছু বেশি।
যে কারণে প্রত্যাশিত কলেজ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা এর কারণ হিসেবে ভর্তি কার্যক্রমে যুক্ত শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, আবেদনের সময় শিক্ষার্থীরা ১০টি কলেজ পছন্দক্রম দেওয়ার সুযোগ পায়।
তারা বারবার পছন্দের কলেজগুলো পছন্দের তালিকায় রাখে। ওই কলেজগুলোতে তাদের নম্বর অনুযায়ী আসন মেলে না। এতে একেবারে শেষ ধাপ পর্যন্ত কিছু শিক্ষার্থী ভালো ফল করেও কলেজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, আমরা সব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে চাই। শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজ না পেয়ে বারবার একই কলেজ পছন্দের তালিকায় রাখে।
এতে তারা নির্ধারিত তিন ধাপে কলেজ বঞ্চিত হয়। তবে অনেক সময় বিশেষ ধাপে আমরা তাদের ভর্তি করিয়ে নিই’।
এসএসসি পরীক্ষায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ১০ হাজার ৮২৩ জন। অধিকাংশের লক্ষ্য দেশসেরা কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসিতে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েও অনেকে বাড়তি প্রত্যাশা নিয়ে চট্টগ্রামে আসে।
এতে চট্টগ্রামের খ্যাতনামা কলেজ হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে একপ্রকার লড়াই চলে। শেষ পর্যন্ত জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীও পছন্দের কলেজ না পেয়ে হতাশ হন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক জাহেদুল হক বলেন, একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দশটি কলেজে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী পছন্দের ক্ষেত্রে ৫-৬টির বেশি কলেজ দেয়নি। তাদের ধারণা ছিল ৫-৬টি কলেজে আবেদন করলে তাদের নাম চলে আসবে। কিন্তু যেসব কলেজে তারা আবেদন করেছে, সেসব কলেজে তাদের তুলনায় বেশি নম্বর পাওয়া আবেদনকারীর সংখ্যা হয়তো বেশি ছিল।
সে কারণে যারা ৫-৬টি কলেজের বেশি পছন্দ দেয়নি, তাদের একটিতেও সুযোগ হয়নি। কিন্তু দশটি কলেজে আবেদন করলে এ সমস্যা হয়তো হতো না।
তিনি বলেন, একাদশে ভর্তির আবেদন চলাকালীন সর্বোচ্চ সংখ্যক কলেজ পছন্দ দিয়ে আবেদন করতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রতি আমরাও বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম।
কিন্তু অনেকেই তা করেননি। অতি আত্মবিশ্বাসের কারণেও এটি হয়েছে। যে কারণে সর্বোচ্চ জিপিএ ধারী হয়েও তারা প্রথম পর্যায়ের ফলাফলে ভর্তির জন্য কোনও কলেজে মনোনীত হয়নি।
ছাত্র-ছাত্রীদের পছন্দের কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম কলেজ। এ কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ৬০০ ও মানবিকে ৩৮০ জনসহ মোট ১ হাজার ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান।
শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা আরেকটি কলেজ হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। এখানে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ৬৬০ জন, মানবিকে ৪৫০ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৬১৫ জনসহ মোট ১ হাজার ৭২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী এবারও একাদশ শ্রেণিতে তিন ধাপে ভর্তির আবেদন নেওয়া হবে। ২৬ মে থেকে আবেদন শুরু হয়ে চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। তিন ধাপে ভর্তি আবেদন, ফি ১৫০ টাকা।
জেএন/হিমেল/পিআর