পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার সন্তান ডা. বাবর আলীর এবারের লক্ষ্য লোৎসে জয়।
এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি পর্বতারোহী একই যাত্রায় এভারেস্ট ও লোৎসে জয় করেননি। তাই এ পর্বত শৃঙ্গ জয় করতে পারলে তা হবে কোনো বাংলাদেশি পর্বতারোহীর জন্য অনন্য এক রেকর্ড।
রোববার সকাল নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় হিমালয়ের মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন বাবর আলী। ১১ বছর পর এটাই এভারেস্টে কোনো বাংলাদেশির সফল অভিযান।
বাবর আলীর এভারেস্ট যাত্রার প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান সোমবার বলেন, “রোববার রাতে বাবর আলীর লোৎসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা থাকলেও, তিনি রওনা হননি। এখন তিনি আছেন ক্যাম্প-৪ এ। সেখানে খাওয়া ও বিশ্রাম নিয়ে নতুন যাত্রার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
“বাবর সুস্থ আছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ (সোমবার) রাতে তিনি নতুন লক্ষ্য লোৎসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন।”
এরআগে ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি এভারেস্ট জয় করেন। তারা হলেন- মুসা ইব্রাহিম, এম এ মুহিত (দুবার), নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীন ও মো. খালেদ হোসাইন।
এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, “ভাই বাবর আলী, খুব খুব আনন্দিত। কিন্তু এখনো বন্ধ হয়ে থাকা শ্বাস ছাড়তে পারছি না, কারণ আমরা আমাদের লক্ষ্যের চার ভাগের এক ভাগ অর্জন করলাম।
“এখন নিরাপদে সাউথ কলে ফিরে এসে আবার যেতে হবে পেছনের ওই কালো চূড়া, মাউন্ট লোৎসে। তারপর সেখান থেকে নিরাপদে বেইজ ক্যাম্পে ফিরে এসো৷ সেই পর্যন্ত আমাদের প্রার্থনা অবিরত চলতে থাকবে।”
সঙ্গে এভারেস্ট চূড়ার একটি ছবিও যুক্ত করেন নিশাত মজুমদার।
বাবরের ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স এর ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে বলা হয়, “আমরা জানি ওই উচ্চতায় একদিন বেশি থাকার ঝুঁকি আছে। পর্বতারোহণ ঝুঁকিপূর্ণ স্পোর্টস। তবুও একদিন বেশি থাকার ঝুঁকি, ক্লান্ত অবস্থায় সামিট পুশ দেওয়ার ঝুঁকির চাইতে অনেকাংশে কম।”
ফরহান জামান বলেন, “উচ্চ পর্বতে পর্বতারোহণে অভিজ্ঞতা ভীষণ জরুরি। বাবরের পর্বতারোহণে ভালোই অভিজ্ঞতা রয়েছে।
“প্রায় ১৬ ঘণ্টার ধকলে স্বাভাবিকভাবেই বাবর কিছুটা ক্লান্তই হবে। তাই ক্যাম্প-৪ এ বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। গতরাতে লোৎসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি।”
পেশায় চিকিৎসক বাবর আলী চট্টগ্রামের প্রথম বাসিন্দা যিনি এভারেস্ট জয় করলেন। গত ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিষয়ে তিনি জানান। পরদিন ১ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে পৌঁছান লুকলাতে। সেখান থেকে পথচলা শুরু করে ১০ এপ্রিল বাবর পৌঁছে যান এভারেস্ট বেজক্যাম্পে।
১৪ মে মাঝরাতে বেজক্যাম্প থেকে শুরু হয় বাবরের স্বপ্নের পথে যাত্রা। এরপর ১৮ মে ক্যাম্প-৪ এর ডেথ জোন পেরিয়ে সেদিন মধ্যরাতে শুরু হয় সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানোর অভিযান।
রোববার সকালে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্ট শীর্ষে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবর আলী। এখন তিনি এভারেস্টের লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে জয় করতে চান।
সবকিছু অনুকূলে থাকলে সোমবার রাতে রওনা করে মঙ্গলবার ভোরে বাবর আলী পৌঁছে যাবেন লোৎসে চূড়ায়। লোৎসের উচ্চতা ২৭ হাজার ৯৪০ ফুট। এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি ওই শিখরে পৌঁছাতে পারেননি।
২০১৪ সালে পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সতীর্থদের নিয়ে নেপাল এবং ভারতের বহু পর্বতে অভিযান করেছেন বাবর। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি সামিট করেছেন নেপালের আমা দাবলাম পর্বত।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বুড়িশ্চর এলাকার লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগম এর দ্বিতীয় সন্তান বাবর ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১ তম ব্যাচের ছাত্র।
কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করলেও আগের অভিযানের সময় ছুটি না মেলায় ত্যাগ করেন চাকরির মোহ।
তার এবারের অভিযানে মোট খরচ হচ্ছে ৪৫ লাখ টাকা। এ অভিযানের মূল পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার লিমিটেড।
এছাড়া সাতটি সহ-পৃষ্ঠপোষক সংস্থা, গণতহবিল এবং অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর সহযোগিতা নিয়ে এভারেস্ট ও লোৎসে জয়ের এ অভিযানের অর্থসংস্থান রয়েছেন বাবর।
জেএন/এমআর