নরসিংদী জেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতাউর রহমান ভূঁইয়া মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২১ মে) রাতে সোয়া ৮টায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান ১৯৪০ সালের ১ ডিসেম্বর নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার বৈলাব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আদুস সোবাহান ভূঁইয়া ও মা মেরী আক্তার।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ১৯৫৬ সালে গাজীপুরের জয়দেবপুরের রাণী বিলাসমনি হাইস্কুল থেকে মেট্রিকলেশন পাশ করে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।
গণমানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা আন্দোলন কর্মসূচিতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের মিছিল মিটিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।
১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের মার্শাল ল’র সময় সরকার বিরোধী আন্দেলনে যুক্ত থাকায় তিনি গ্রেফতার আশঙ্কায় নরসিংদী ফিরে যান এবং আত্মগোপন করেন।
পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে তিনি নরসিংদী কলেজে আবার আইএ ভর্তি হন। নরসিংদী কলেজে হাশিম মিয়ার সংস্পর্শে তিনি ছাত্র ইউনিয়নকে সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন।
এই সময় তিনি সরসিংদী কলেজে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠায় সাহসী ভূমিকা রাখেন। তার নেতৃত্বে মূখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন কতৃক স্থাপিত কলেজের ভিত্তিপ্রস্থর উঠিয়ে সেই স্থানে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি স্মারক শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়।
১৯৬২ সালে মো. আতাউর রহমান ভূঁইয়া নরসিংদী ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। সেই সময় হামিদুর রহমান এর শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে নরসিংদীতে আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৯৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে ঢাকায় ছাত্র জনতার উপর গুলি চালিয়ে তিনজনকে হত্যাকরা হলে তার প্রতিবাদে নরসিংদীতে বিক্ষোভ ধর্মঘট কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেন তিনি।
পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ উপেক্ষা করে নরসিংদীর মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয়ে নরসিংদী কলেজে বিএ ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে আউয়ুব খানের বিপক্ষে ফাতিমা জিন্নাহ’র নির্বাচনী প্রচারনায় সক্রিয় ছিলেন তিনি।
১৯৬৫ সালে তিনি বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। পরবর্তীতে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রী লাভ করেন। পার্টির নির্দেশে ব্রাহ্মন্দী স্কুল সহ বিভিন্ন স্কুলে ক্ষন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করার পর ১৯৬৬ সালে নরসিংদী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন।
১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ (মোজাফফর)র সাথে যুক্ত হন মো: আতাউর রহমান ভূঁইয়া। অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করেছেন তিনি। শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত থেকেও ৬৬’র ছয়দফা ও ৬৯’র গণ-অভূত্থান আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্বে ছিলেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন মো: আতাউর রহমান ভূঁইয়া। যুদ্ধ শেষে তিনি আবার শিক্ষকতা পেশায় ফিরেন। ১৯৯০ সালে তিনি ন্যাপের পক্ষে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। বিগত প্রায় এক দশক সময় কাল রাজনৈতিক বিষয়ে নিভৃতে একান্ত উদ্বিগ্ন হয়ে অনেকটা একাকী ছিলেন তিনি।
এই সময়ে পারিবারিক ও সীমিত সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন। অনেকটা নিভৃতে তিনি তার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন অসহায় মানুষকে সাধ্যমত আর্থিক ও সৎপরামর্শ দিয়ে।
মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ বুধবার বাদ জোহর নরসিংদীর দত্তপাড়া জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
জেএন/পিআর