ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধার করেছে ভারতের পুলিশ।
বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এমপি আজীম একা ভারতে গেছেন বলে শুরু থেকে প্রচার করা হলেও আসলে তার সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন। তারাও বাংলাদেশি বলে এখন পর্যন্ত তথ্য মিলেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার কিছু ফুটেজে ভারতীয় গোয়েন্দারা এমন তথ্য পেয়েছেন। ওই দুই ব্যক্তি এমপি আজীমের দীর্ঘদিনের পরিচিত। তাদের বাড়ি এমপির এলাকায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে গত ১২ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, দর্শনার বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এমপি আনার। ইমিগ্রেশন শেষ করে ভ্যানে চড়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন তিনি। এ সময় এমপি আনার সাদা শার্ট পরিহিত ছিলেন। ভ্যানচালক আর এমপি আনার ছাড়া ভ্যানে আরও কেউ ছিলেন। পিছনে একটি ব্যাগও ছিল।
চিকিৎসা ও বন্ধুর মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে গত ১২ মে ভারতে যান আজীম। পরদিন ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। গত ১৬ মে সকাল ৭টা ৪৬ মিনিটে এমপি আজীমের ফোন থেকে পিএসের নম্বরে সর্বশেষ কল আসে। কলটি ধরতে পারেননি পিএস। এক মিনিট পর পিএস তাঁকে কল করলে ওপাশ থেকে রিসিভ হয়নি। এর পর থেকে এমপির সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই।
এমপি আজীম একা দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারতের গেদে প্রবেশ করেন। এর পর কলকাতার ব্যারাকপুর সংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় পূর্বপরিচিত স্বর্ণ কারবারি গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। আজীম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের বরানগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন গোপাল। তাঁর দাবি, ‘১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন আজীম। এর পর তাঁর হোয়াটসঅ্যাপের একটি খুদেবার্তায় এমপি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কাজে দিল্লি যাচ্ছি। পৌঁছে ফোন করব, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।’ ১৫ মে বেলা ১১টা ২১ মিনিটে আরেকটি মেসেজে জানান, ‘আমি দিল্লি পৌঁছলাম, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছেন। ফোন করার দরকার নেই।’
এক সময় আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টভুক্ত ছিলেন আজীম। হুন্ডি কারবার, চোরাচালান ও পাচারের অভিযোগে ইন্টারপোল তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল।
ঝিনাইদহের লোকজন জানান, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছিলেন আজীম। সীমান্তকেন্দ্রিক মাদক কারবারে ছিল তাঁর বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, নানা অপরাধে এক সময় তাঁর বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি মামলা ছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রভাব বলয় তৈরি করেন। ধীরে ধীরে মামলার সংখ্যা কমতে থাকে। ২০১৪ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর কালীগঞ্জে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। চোরাচালানের মধ্য দিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হন।
জানা যায়, নিখোঁজ ডায়েরির ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও খোঁজ মেলেনি সংসদ সদস্য আজীমের। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিজিপি অনুপম সিং বলেন, ‘নির্বাচনের কারণে তদন্তে দেরি হচ্ছে।’
এদিকে যে গাড়িতে সংসদ সদস্য উঠেছিলেন, সেই চালককে জিজ্ঞাসা করে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু জানাতে চাননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
এমপি আজীম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ভারতেও নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ বলছেন, তিনি বেঁচে নেই। আবার কারও দাবি, তিনি একটি ক্রুজে রয়েছেন। গোপাল বিশ্বাসের এসআরবি জুয়েলার্স গতকাল বন্ধ পাওয়া গেছে। তিনি বাড়িতে থাকলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।
জেএন/এমআর