‘খণ্ডবিখণ্ড করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এমপি আনারের মরদেহ’

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়ে নিখোঁজের ছয়দিন পর কলকাতার একটি এলাকা থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কর্মকর্তারা কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে। এ সময় সেখান থেকে মরদেহের খণ্ডিত কয়েকটি অংশ উদ্ধার করা হলেও সেগুলো আনোয়ারুল আজীমের কি না তা এনডিটিভিকে নিশ্চিত করতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।

- Advertisement -

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, গত ১২ মে কলকাতায় আসার পর নিখোঁজ হওয়া আনোয়ারুল আজীম আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

- Advertisement -google news follower

তবে কলকাতা পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া একজন ক্যাবচালক জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়েছে এবং মরদেহ দেহ খণ্ডবিখণ্ড করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

কলকাতা বিধান নগর পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মানব শ্রিংলা বলেছেন, “ক্যাব চালক স্বীকারোক্তি দিয়েছে ১৩ মে যে ব্যক্তিকে সে গাড়িতে তুলেছিল তাকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে লাশ ছড়িয়ে দিয়েছে।’’

- Advertisement -islamibank

পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, যে ফ্ল্যাটে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে; সেটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সেখানে কাউকে এখনও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশের সূত্র বলেছে, ওই ফ্ল্যাটে তিনজনকে ঢুকতে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে একজন নারী। তবে ওই তিনজনকে সেখান থেকে বের হতে আর দেখা যায়নি।

কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা টাউনের একটি ফ্ল্যাট ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, আনোয়ারুল আজীমের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কলকাতা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন সকালে কলকাতায় ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন বলে নিশ্চিত করেছে কলকাতায় বাংলাদেশের হাইকমিশন।

এর আগে, গত ২০ মে আজীমের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পায়, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারের কোনও জায়গায়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস কর্তৃপক্ষ এই তথ্য পেয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি উপ-দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

কলকাতার উত্তর শহরতলি বরাহনগর এলাকার সিঁথিতে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ারুল আজীম, সেই গোপাল বিশ্বাস বলেছেন, ১৩ মে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে ভাড়া করা গাড়িতে উঠেছিলেন আজীম, সেটির চালকের সন্ধান পেয়েছে বলেই স্থানীয় পুলিশ তাকে জানিয়েছে।

‌‌‘‘পুলিশের কাছে আমি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলাম। তারা ওই গাড়িটি খুঁজে বের করেছে আর চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই চালক নাকি পুলিশকে জানিয়েছেন যে সংসদ সদস্যের সঙ্গে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। তাদের দু’জনকে তিনি কলকাতা সংলগ্ন নিউ টাউন এলাকায় ছেড়ে দেন ১৩ মে।’’

কলকাতার বরাহনগর থানায় দায়ের করা নিখোঁজ ডায়েরি
২০ মে উপ-দূতাবাসের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেস সচিব রঞ্জন সেন জানান, ‘‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সংসদ সদস্যের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানানো হয় শনিবার। তারপরই আমরা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা খোঁজখবর করছেন এমনটাই আমাদের জানানো হয়েছে।’’

আবার শেষবার যেহেতু নিখোঁজ সংসদ সদস্যকে কলকাতায় দেখা গিয়েছিল, তাই কলকাতা পুলিশের সঙ্গেও অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ রাখছিল বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস।

• ডাক্তার দেখাতে বের হয়ে নিখোঁজ
কলকাতার সিঁথি অঞ্চলের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস এর আগে বলেছিলেন, আনোয়ারুল আজীমের সঙ্গে দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে তার পারিবারিক সম্পর্ক। গোপাল বিশ্বাস বলেন, এবারে তিনি এসে আমাকে বলেছিলেন যে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবেন। কোন ডাক্তার ভালো হবে, সেটাও জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার জানাশোনা কোনও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই, তাই আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম সল্ট লেকের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারেন।

‘‘আমরা একসঙ্গে সকালের জলখাবার খেয়েছিলাম। তারপরে এটাও তাকে বলেছিলাম যে আমার গাড়ি সেদিন নেই। তিনি যেন গাড়ির বন্দোবস্ত করে নেন। এরপর আমি বাড়ির একতলায় অফিসে চলে আসি।’’

গোপাল বলেন, ‘‘এরপর আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দুপুরে বের হওয়ার সময়ে আমাকে বলে যান যে তিনি সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবেন। তার খোঁজ না পাওয়ার পর আমি যখন সিসিটিভি ফুটেজ দেখি, তখন জানতে পারি যে তিনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে।’’

‘‘সে খবর জানতে পেরে কলকাতায় ওর যত ঘনিষ্ঠ মানুষ আছেন বলে আমি জানি, সবাইকে বিষয়টা জানাই। তারাও খোঁজ খবর করতে শুরু করেন। কিন্তু কোনোভাবেই আজীমকে ফোনে পাওয়া যায়নি,’’ বলেন গোপাল বিশ্বাস।

পরের দিন ১৮ মে বরাহনগর থানায় যান তিনি। গোপাল বলেন, সেখানে আমাকে সারাদিন বসিয়ে রাখা হয়। পুলিশ আমার বাড়িতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। সেসব খতিয়ে দেখে আমার নিখোঁজ ডায়েরি নেওয়া হয়। তারা ওই ভাড়ার গাড়িটির নম্বরও পেয়ে যায়। চালকের সঙ্গে কথা বলেছে। নিশ্চয়ই পুলিশ খোঁজখবর করছে, আমাকে তো আর সব তথ্য জানাচ্ছে না।’’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস যে তথ্য পেয়েছিল, সে অনুযায়ী ১৭ মে আজীমের মোবাইল নম্বরটি কিছুক্ষণের জন্য বিহারে অবস্থান করছিল। আবার এটাও জানতে পেরেছে, তারা যে মোবাইল সেট থেকে সিম কার্ডটি আলাদা করে রাখার কারণে সঠিক অবস্থান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এর আগে, ঢাকায় ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘‘তার দু’টি বাংলাদেশি নম্বর আছে আর একটি ভারতের নম্বর। আমরা ভারতীয় পুলিশের সহযোগিতায় তার ভারতীয় নম্বরটি দেখলাম মুজাফফরাবাদ অর্থাৎ বিহারের দিকে।’’

ঘটনাচক্রে বিহারে মুজাফফরাবাদ নামের জায়গা নেই। পাকিস্তান শাসিত জম্মু-কাশ্মিরের রাজধানীর নাম মুজাফফরাবাদ। আর প্রায় কাছাকাছি যে নামের জায়গা বিহারে আছে, সেই জায়গার নাম মুজফ্ফরপুর।

ডিবি প্রধান সেদিন জানিয়েছেন, ‘‘আমরা বিষয়টার খোঁজখবর রাখছি। ভারতের যারা বাংলাদেশে আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলছি, আবার ভারতীয় পুলিশের সঙ্গেও কথা বলছি। উনার পরিবারও যোগাযোগ রাখছে আমাদের সঙ্গে। তার মেয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন।’’

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM