ঘূর্ণিঝড় রেমাল

উপকূল লণ্ডভণ্ড, গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত

অনলাইন ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমাল গতরাতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে। রাত পৌনে নয়টার দিকে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র আঘাত হানতে শুরু করে। এ সময় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড়টি। সঙ্গে উঁচু জলোচ্ছ্বাস হলে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপসানালয়, মাছের ঘের ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।

- Advertisement -

ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার আগেই কলাপাড়ায় জোয়ারের পানিতে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে সাতক্ষীরায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

- Advertisement -google news follower

ঘূর্ণিঝড়টি কতটা তাণ্ডব চালিয়েছে রাতে তেমনটা বোঝা না গেলেও সকাল হওয়ার পর আস্তে আস্তে ঝড়টির তাণ্ডবলীলা স্পষ্ট হচ্ছে। উপকূলের বিভিন্ন জেলা থেকে যেসব খবর আসছে তাতে উপকূলজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডবই চালিয়েছে রেমাল।

বাগেরহাটে গ্রামের পর গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জোয়ারের পানিতে ডুবেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। আগাম প্রস্তুতির কারণে প্রাণহানি কম হলেও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে গবাদি পশু, মাছের ঘের ও ফসলি ক্ষেত। বাড়িঘর ও জনপদ ভাসছে নোনাপানিতে। ঝড়ে উপড়ে গেছে গাছপালা। বিচ্ছিন্ন হয়েছে লাখো গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ। বিঘ্নিত হয়েছে মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট সেবা। বিভিন্ন এলাকায় সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পটুয়াখালীতে একজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

- Advertisement -islamibank

রেমালের প্রভাবে বরগুনার প্রধান তিনটি নদী বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উচ্চ জোয়ারের চাপে বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। এছাড়া জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে বরগুনার নিম্নাঞ্চল। বরগুনার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২০ হাজারের বেশি মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী, ডালভাঙা ও নলী এলাকা, নলটোনা ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া, নলটোনা, সোনাতল ও কুমিড়মারা, বুড়িরচর ইউনিয়নের গুলবুনিয়া, বাঁশবুনিয়া, চালিতাতলী, আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়ন, বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি, কুমড়াখালী ও গুলিশাখালী এলাকা, পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা, জীনতলা, টেংরা, কালমেঘা, কাকচিড়া, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ছোটবগী, নিদ্রার চর, তেঁতুলবাড়িয়া, খোট্টার চর, সোনাকাটা, নিউপাড়া, আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, গুলিশাখালী, বামনা উপজেলার রামনা, বদনীখালী, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি, ঝিলবুনিয়া, ছোট মোকামিয়া এলাকার বাঁধের বাইরের লক্ষাধিক বাড়িঘর অধিক জোয়ারে নিমজ্জিত হয়েছে।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর নদনদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়ায় কোথাও ভাঙা বাঁধ ভেঙে, কোথাও বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। প্লাবিত হয়েছে নিচু এলাকাগুলোও। নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি এলাকার বেড়িবাঁধ। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা, চিনাবুনিয়া ও গরুভাঙা গ্রাম প্লাবিত হয়। অন্যদিকে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা গ্রামেও অনেক আগ থেকেই ভেঙে থাকা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে লোকালয়।

পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট পানি বাড়লে বরগুনার আমতলী উপজেলার বালিয়াতলী ও পশুর বুনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায় বলে জানিয়েছেন আরপাঙ্গাশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেলী পারভীন মালা। তিনি বলেন, পায়রা নদীতে পানি বৃদ্ধির বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৩০০ ফুট ভেঙে গেছে। এর ফলে বালিয়াতলী ও পশুরবুনিয়া গ্রাম ২-৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে বোরো ধানের ক্ষেত।

রেমালের জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। রোববার দুপুর থেকে বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের স্থলভাগ চার থেকে সাত ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। সুন্দরবনের সবচেয়ে উঁচু এলাকা বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রও চার ফুট পানিতে তলিয়ে যায়।

প্রাণ ঝরেছে দুইজনের

পটুয়াখালীতে বোন ও ফুফুকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে যাওয়ার সময় পানির তোড়ে ভেসে মারা গেছেন মো. শরীফ হাওলাদার নামে এক যুবক। ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ ঝরেছে আরও এক বয়স্ক ব্যক্তির। নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় মারা যান শওকাত মোড়ল নামে ৬৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ।

রোববার দুপুরে কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় তলিয়ে যাওয়া সড়ক সাঁতার কেটে পার হতে গেলে স্রোতের তোড়ে ভেসে যান শরীফ হাওলাদার। এক ঘণ্টা পর ওই স্থান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।

নিহত শরীফ ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিম হাওলাদারের ছেলে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল বলেন, শরীফের ফুফু কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুরের দিকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন এবং ফুফুকে উদ্ধার করতে যায়। পথে বেড়িবাঁধের বাইরে একটি গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। শরীফ সাঁতার কেটে সড়কটি পার হয়ে ফুফুর ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঢেউয়ের তোড়ে তিনি হারিয়ে যান।

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় পথে শওকাত মোড়ল নামে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

শ্যামনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে নাপিতখালী গ্রামে খোলা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়েছে। হয়ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM