ঘূর্ণিঝড় রেমাল

উপকূলকে রক্ষায় সুন্দরবন এবারও ঢাল হিসেবে কাজ করেছে

অনলাইন ডেস্ক

সুন্দরবন যেন উপকূল এলাকায় প্রকৃতির দেয়াল। আর এই দেওয়ালের কারণে উপকূল এলাকায় বন্যার পানি, দমকা বাতাস ঢুকতে পারে না। ঘূর্ণিঝড় রেমালের ছোবল থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় সুন্দরবন যে ঢাল হিসেবে কাজ করেছে, এমনটাই বলছেন সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব ও পরিবেশবিদ অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহি।

- Advertisement -

অপরদিকে নিজের পর্যবেক্ষণ থেকে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী ও মনে করেন সুন্দরবনের কারণেই বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এর কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে সাতক্ষীরা উপকূল। এই সুন্দরবন না থাকলে সাতক্ষীরা উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বড় ধরনের তাণ্ডব হতে পারতো বলে তিনি মনে করেন করেন।

- Advertisement -google news follower

আশেক-ই এলাহি বলেন, সাতক্ষীরা উপকূলের জন্য সুন্দরবন যেন একটি দেয়াল। সুন্দরবনের জন্যই প্রতিবছর বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায় সাতক্ষীরা উপকূল। তবে এই সুন্দরবন রক্ষার জন্য কারোর কোন মাথাব্যথা নেই। তিনি সুন্দরবন রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

রোববার (২৬ মে) রাতে সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এরপর এটি সুন্দরবনের খুলনা, বাগেরহাট ও মংলাসহ কয়েকটি জেলার উপর দিয়ে বয়ে যায়।

- Advertisement -islamibank

তবে প্রবল শক্তির এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সুন্দরবনের গাছপালার কারণে সাতক্ষীরা উপকূলে সেভাবে পড়েনি। বনে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ যেখানে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ছিল, সেটা বন পার হয়ে লোকালয়ে যেতে যেতে শক্তি হারিয়ে দমকা বাতাসে রূপ নেয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাস লোকালয়ে পৌঁছানোর আগে সুন্দরবনে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক কমে যায়। এ কারণে উপকূলীয় এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি বা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তেমন থাকে না বলে বলছেন পরিবেশবিদরা।

উপকূলে আঘাত হানার সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার, কিন্তু সুন্দরবনের গাছপালার কারণে সেটির প্রভাব ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের মত অনুভূত হয় বলে বলছেন পরিবেশবিদ অধ্যক্ষ আশেক-ইলাহী।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মূলত সুন্দরবনের উপর দিয়ে দুই ধরনের ধাক্কা যায়। প্রথমত তীব্রগতির বাতাস এরপর জলোচ্ছ্বাস।

উপকূলীয় এলাকা থেকে বড় বড় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে এর আগেও ঢাল হিসেবে কাজ করেছে সুন্দরবন। বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডব থেকে এই বন উপকূলকে রক্ষা করেছে। যদিও সেই দুর্যোগে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছিল বনাঞ্চল।

পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী ধারণা করছেন, এবারের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্য প্রাণীদের ওপর বড় ধরনের কোনোন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। কেননা সুন্দরবনে যে সময়টায় জোয়ার হয়, সে সময়ে ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেনি। যার কারণে এবার পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চাইতে খুব একটা বেশি ছিল না। তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, এবারে বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি তেমন একটা হয়নি।

তিনি বলেন, তবে ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল বেগে সুন্দরবনে আছড়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় গাছপালা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বন কর্মকর্তারা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সুন্দরবনে জরিপ চালিয়ে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।

বনে যত্রতত্র গাছ কাটা ঠেকাতে ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বনের নিরাপত্তা বাড়ানো, সেইসঙ্গে বনায়নের জন্য বেশি বেশি গাছ লাগানোর সুপারিশ করেছেন উপকূলবাসী।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলি বলেন, সোমবার সকাল থেকে আশঙ্কা মুক্ত উপকূলীয় এলাকা। নতুন করে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবন নেই বলে জানান তিনি।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM