চট্টগ্রাম বন্দরের নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য গত বছরের ৬ ডিসেম্বর চুক্তি করে সৌদি আরবের জেদ্দাভিত্তিক রেড সি গেইটওয়ে (আরএসজিটি)।
গত ৬ এপ্রিল পিসিটির কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও এনবিআরের অনুমোদন পাওয়াসহ নানা জটিলতায় পিছিয়েছে কার্যক্রম শুরুর তারিখ।
অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ করে আজ সোমবার (১০ জুন) রপ্তানি পণ্য নিতে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ‘মার্স্ক দাভাও’ নামের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ এসে ভিড়েছে নবনির্মিত এ কনটেইনার টার্মিনালে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) রপ্তানি পণ্য নিয়ে জাহাজটি টার্মিনাল ছেড়ে যাবে। আর এর মাধ্যমেই ‘ল্যান্ড লর্ড পোর্ট’ ধারণার যুগে যুক্ত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের নাম।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টার্মিনালে পণ্য খালাসের গ্যান্ট্রি ক্রেন না থাকায় আপাতত শুধু রপ্তানি পণ্য পরিবহন এবং ক্রেন আছে এমন গিয়ার জাহাজ টার্মিনালে ভিড়বে।
কয়েকটি জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের পর আমদানি পণ্যবাহী জাহাজও ভিড়বে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে যে টার্মিনালটি বছরে প্রায় ৫ লাখ বিশ-ফুট সমতুল্য ইউনিট (টিইইউ) পরিচালনা করবে। তবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সব সুবিধা নিয়ে টার্মিনালটি পুরোদমে চালু হতে আরও দুবছর সময় লাগতে পারে।
এর আগে সোমবার ‘মার্স্ক দাভাও’ নামের একটি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানোর কথা বলেছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক। বলেছিলেন, এ উপলক্ষে মঙ্গলবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনালে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
সমুদ্রগামী জাহাজের তথ্যসংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকের তথ্যে দেখা গেছে, শনিবার দুপুরে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে।
বন্দর সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদেশি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পিসিটিতে আসা প্রথম জাহাজ ‘মার্স্ক দাভাও’। এটি সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী। মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হয়ে কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছে। জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৫ দশমিক ৯৯ মিটার ও ড্রাফট (পানির নিচে থাকা অংশ) ৯ মিটার।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে কনটেইনার টার্মিনাল চালু করা হয়েছিল, সেটা এখন পুরোদমে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই চিরচেনা জাহাজ জটের সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে।
জানা গেছে, এতদিন দেশি অপারেটররাই এনসিটি ও সিসিটি কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করেছে। এবার বিদেশি অপারেটর পরিচালিত এই টার্মিনাল নতুন প্রতিযোগিতা তৈরি করবে। এ জন্য ব্যবহারকারীদের নতুন এক অভিজ্ঞতা দিতে চান টার্মিনাল পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ।
এনবিআরের পক্ষ থেকে এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য নীতিমালা তৈরি করেছে। এই টার্মিনাল পরিচালনায় থাকছে ভিন্নতা। জেটিতে জাহাজ ভিড়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগেই রপ্তানি পণ্য টার্মিনালে নিয়ে আসতে হবে। এতে ডিপোগুলোর ওপর চাপ কমবে। প্রাথমিক কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও এ ব্যাপারে আশাবাদী বন্দর ব্যবহারকারীরা।
আরএসজিটি-বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী এরউইন হ্যাজি বলেন, ‘আমাদের বেশ কিছু লক্ষ্য আছে। আমরা বেশি কন্টেইনার ওঠা-নামা নিশ্চিত করতে চাই। বছরে যেটি চার থেকে পাঁচ লাখ একক হতে পারে।
নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ব্যবহারকারীদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব। তাঁদের আমরা অংশীদার হিসেবেই সেবা দেব।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের তিনটি জেটিতে একসাথে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ভিড়তে পারবে। বছরে প্রায় ৫ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম এই টার্মিনাল। ২২ বছরের চুক্তি অনুযায়ী সৌদি প্রতিষ্ঠান থেকে রয়্যালিটি বা রাজস্ব পাবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জেএন/পিআর