ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমরিং)। আসনে লড়ছেনও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। ভিআইপি এ আসনে মহানগর আওয়ামী লীগরে সহসভাপতি ডা. আফছারুল আমিন এমপির প্রতিদ্বন্দ্বী কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর জমজমাট প্রচারণায় এখন মুখর হালিশহর-ডবলমুরিং এলাকা।
গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় আসনটিতে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান গড়ে উঠেছে। তবে এখানে ধানের শীষের প্রভাবও কম নয়। এখানকার গলিতে গলিতে নৌকার পাশাপাশি ধানের শীষের পোস্টারই এর প্রমাণ।
আওয়ামী লীগ কর্মীরা নৌকার পক্ষে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। সমানে চলছে মাইকিং। এলাকায় এলাকায় গিয়ে ভোট ছাইছেন মহাজোট প্রার্থী আফছারুল আমিন।
অপরদিকে বসে নেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমানও। ধানের শীষের ভোট চেয়ে তিনি সমানে চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ।
এবার মনোনয়ন দৌড়ের শুরুতে কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন আফছারুল আমিন। তাঁর বিকল্প হিসেবে জোর আলোচনায় ছিলেন সাবেক সিটি মেয়র মনজুর আলম। তবে নিজের পরিচ্ছন্ন ইমেজ দিয়ে ঠিকই দলের মনোনয়ন আদায় করেছেন ডা. আফছারুল।
আসনের কয়েকজনে ভোটার জয়নিউজকে জানান, নির্বাচনি এলাকায় এ মানুষটির চলাফেরা নিতান্তই সাদামাটা। অন্য দশজনের মতো জীবনযাপন করেন ডা. আফছারুল আমীন। এমপি-মন্ত্রী থাকার সময়ও পুলিশ প্রটোকল-গানম্যান ছাড়াই তিনি চলাফেরা করেন। শোডাউন, লোকদেখানো-মিথ্যা আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি তিনি অপছন্দ করেন। এসব কারণে এলাকায় তাঁর আলাদা ইমেজ রয়েছে। এ কারণেই বারবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
নিজেকে হেভিওয়েট প্রার্থী মানতে নারাজ আফছারুল। তাঁর মতে, মসজিদের সব মুসল্লি যেমন সমান, একইভাবে পরীক্ষার হলের সব পরীক্ষার্থীই সমান।
ডা. আফছারুল আমীন জয়নিউজকে বলেন, সাধারণ ভোটাররা চিরাচরিত প্রথায় ভোট দেন। আমরা তো মাছে-ভাতে বাঙালি। বাঙালিরা কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ বোঝে। তাই তারা বুঝেশুনেই ভোট দেবেন।
অপরদিকে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমানের নির্বাচনি এলাকায় রয়েছে দারুণ গ্রহণযোগ্যতা। ২০০৮ সালে এ আসন থেকে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে অল্প ভোটে পরাজিত হন তিনি। নির্বাচনে হেরেও এলাকা ত্যাগ করেননি তিনি। আসনটিতে থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থান আছে।
স্থানীয় কয়েকজন ভোটোরের মতে, চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগবিরোধী ভোট বেশি। কিন্তু অন্য এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল নোমান এ সুযোগ কতটুকু কাজে লাগাতে পারেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
আবদুল্লাহ আল নোমান জয়নিউজকে বলেন, ২০০৮ সালে আমি হালিশহর-ডবলমুরিং থেকে প্রথম নির্বাচন করি। কারচুপি না হলে আমিই সে নির্বাচনে বিজয়ী হতাম। এবারও অনেক আগে থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। তবে এ পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোটের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। কিছুদিন আগে সরকার দলের সন্ত্রাসীরা ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে আমার নির্বাচনি প্রচারে হামলা চালিয়ে মাইক ভাংচুর করেছে।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪০ হাজার ২১০ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৩৬ জন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরের চৌমুহনী এলাকার একটি চায়ের দোকানে নৌকা ও ধানের শীষের পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল তর্ক। একজন বলেলেন, আওয়ামী লীগ জিততে পারবে না বলেই পুলিশ দিয়ে বিরোধী দলকে ঠ্যাঙাচ্ছে। আরেকজন তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন, সরকার ১০ বছরে যে উন্নতি করেছে তাতে জনগণের ভোট আওয়ামী লীগের বাক্সেই পড়বে।
আরেকটু সামনে এগোতেই নতুন এক আলোচনা। একজন বলেন, চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের ভোটব্যাঙ্ক আছে। তাদের ভোট বিএনপি পাবে। অন্যজন বললেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজত যোগ দিয়েছে। হালিশহর আবাসিকে হেফাজতের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা আছে। সেখানকার অনেক ছাত্র-শিক্ষক চট্টগ্রাম-১০ আসনের ভোটার। তাদের ভোট নৌকায় যাবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর জমজমাট প্রচারণায় এখন মুখর হালিশহর-ডবলমুরিং। নিজ নিজ দলের কর্মী-সমর্থকদের বিশ্বাস তাঁদের প্রার্থীই নির্বাচনে জয়ী হবেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিজয়পদক কার গলায় যায় তা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।