কোরবানির ঈদে বেশি ব্যস্ততা থাকে পশু নিয়েই। বিশেষ করে প্রথম দিনটি গরুর পেছনে ব্যয় করতে হয়। তবে দৃশ্যমান উদ্যাপন শুরু হয় দ্বিতীয় দিন থেকে।
কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে গেলে স্বাচ্ছন্দ্যে বাসা থেকে বের হয়ে আসতে থাকে মানুষ। চট্টগ্রাম শহরে আত্মীয়-পরিজনের বাসায় বেড়ানো, দাওয়াত খাওয়া বা অন্যান্য সামাজিকতা কম হয়।
বরং ফাঁকা শহরে ঘুরে বেড়াতেই বেশি দেখা যায়। চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক, পতেঙ্গা সৈকত, ডিসি পার্ক ও ভাটিয়ারি লেকসহ সকল বিনোদনকেন্দ্র গুলোতে ভিড় বেড়ে এ সময় কয়েকগুণ হয়ে যায়।
সিনেমা হল, কফিশপ সবই থাকে জমজমাট। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। বিষয়গুলো মাথায় রেখেই চট্টগ্রাম নগরীতে ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা :
ঈদে বিনোদনপ্রেমীদের সবেচেয়ে বড় ভিড় পরিলক্ষিত হয় ফয়েসলেক চিড়িয়াখানায়। শিশুরা তো বটেই, বড়রা বিভিন্ন প্রাণী দেখে আনন্দঘন সময় কাটান। এবারও বাঘ হাতি বানর,সিংহসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর খাঁচার সামনে কৌতূহলী চোখে দাঁড়াবেন দর্শনার্থীরা।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, স্বাভাবিক ছুটির দিনে সেখানে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার হাজার দর্শনার্থী হয়। ঈদে সেটা বেড়ে অর্ধলক্ষের কাছাকাছি হয়ে যায়। সে অনুযায়ীই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখার কর্তৃপক্ষ।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, ঈদ মানে আনন্দ। তরুণ-তরুণীর প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিবছর ঈদেও মতো এবারও চিড়িয়াখানাকে সাজানো হয়েছে।
প্রতিবছর ঈদে চিড়িয়াখানায় অন্তত অর্ধলাখ মানুষের সমাগম ঘটে। সে হিসেবে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।
আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশু পার্ক :
ঈদের হাসি-আনন্দের সঙ্গী হবে শিশু পার্ক গুলোও। আগ্রাবাদ কর্ণফুলি শিশু পার্কটিও সেজেছে বহুরুপে। চট্টগ্রাম নগরের শিশু-কিশোরদের প্রধানতম বিনোদনকেন্দ্রই বলা যায় এটিকে।
সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টির মতো রাইড আছে এখানে। পরিবারের সকলের চড়ার মতো আছে অন্তত ১০টি রাইড। বাকিগুলো শিশুদের।
আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশুপার্কের পরিচালক জুয়েল বলেন, ঈদে আমাদের বিশেষ আক্রর্ষণ হচ্ছে নতুন ড্রাগন রাইড। যেটি রমজানের ঈদের সময় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এবারও শিশুদের জন্য তাই থাকছে।
এ পার্কের ধারন ক্ষমতা ১৫-২০ হাজার মানুষ। পার্ক কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই একটি উদ্যোগ নিই। সেটি হচ্ছে বিভিন্ন এতিমখানা, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ শতাংশ ডিস্কাউন্ট দেয়া হয়। আবার পথশিশুদের জন্য সম্পুন্ন বিনামূল্যে পার্কে প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়। এবারও তাই রয়েছে।
এদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পর্যটকদের আনন্দ উপভোগের জন্য অন্যান্য যে সব স্পট রয়েছে সেগুলোও বর্ণিল সাজে সেজেছে। অপেক্ষায় আছে পর্যটন অতিথিদের জন্য।
এরমধ্যে অন্যতম হলো- পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নেভাল বিচ, চট্টগ্রাম মেরিন ড্রাইভ সড়ক, টোল রোড, ফয়’স লেক, সি আর বি, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর প্রজাপতি পার্ক, ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক, আনোয়ারা পারকি সমুদ্র সৈকত, মহামায়া লেক, নাপিত্যাছড়া ঝর্না, খৈয়াছড়া ঝর্না ইত্যাদি।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত :
কক্সবাজারের পর দেশের অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষনীয় সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। ঈদকে ঘিরে প্রতিবছর এই সৈকত হাজার হাজার পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর হয়ে ওঠে।
বিশেষ করে ঈদের দিন থেকে পুরো সপ্তাহ জুড়ে চট্টগ্রাম ও জেলার আশে-পাশের সব উপজেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ সমুদ্রের অপর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমান পতেঙ্গায়।
এবারের ঈদেও কয়েক লাখ পর্যটক পতেঙ্গা ও নেভাল বিচের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পতেঙ্গা সি-বিচের তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, পতেঙ্গা সমূদ্র সৈকতে ঈদের দিন থেকে পরবর্তি এক সপ্তাহ পর্যন্ত মানুষের ভিড় জমবে।
এ জন্যে পতেঙ্গা সি-বিচ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় ৯-১০ কিলোমিটার পতেঙ্গা সি-বিচ এলাকাকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৫-৬ বছর ধরে পতেঙ্গা সি-বিচে অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এতে উন্নত বিশ্বের মতো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে পতেঙ্গা সি-বিচ। এরপর থেকে এই সি-বিচে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের আনা-গোনা বেড়েছে।
ডিসি পার্ক :
শহর থেকে একটু বাইরে অবস্থিত ডিসি পার্ক। প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু সময় কাটাতে চাইলে ডিসি পার্কের কোনো বিকল্প নেই। ইতিমধ্যেই যা সারাদেশ ব্যাপী আলোচিত। কর্তৃপক্ষ আশা করছে ব্যাপক পর্যটক সমাগম হবে এবারের ঈদে।
পুরো পার্ক জুড়ে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতাও থাকবে।
স্বাধীনতা কমপ্লেক্স :
স্বাধীনতা কমপ্লেক্স জেনারেল ম্যানেজার মো. আলী জনী বলেন, নগরীর চাঁন্দগাঁও এলাকায় অবস্থি স্বাধীনতা কমপ্লেক্সে আসা মানেই এক জায়গায় পুরো বাংলাদেশকে দেখা।
এখানে বাংলাদেশের শিকড় রয়েছে। এরমধ্যে আমাদের ঈদের প্রস্তুতিও ভালোভাবে নেয়া হয়েছে। পার্কের বিভিন্ন স্থানে রং করা হয়েছে। সেসব মেরামত করা হচ্ছে।
বাটারফ্লাই পার্ক :
ইন্ট্রাকো গ্রুপের বাটারফ্লাই পার্ক এডমিন ইন্দ্রজিৎ আচার্য বলেন, রমজানের ঈদেই নতুন দুইটি রাইড যোগ করা হয়েছে। সেগুলো আছে। এরমধ্যে একটি পানিতে ঘুরার বোর্ড, আরেকটি ট্রেন রাইড। সব মিলে এখানে মোট ৮টি রাইড আছে। বাকি রাইডগুলো ফ্রি থাকে সবার জন্য।
জাম্বুরি পার্ক :
এছাড়া আগ্রাবাদ-জাম্বুরি পার্কসহ উন্মুক্ত স্থানের পার্কগুলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ দুই স্থান খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
ফয়েসলেক:
ফয়েসলেকেও যাবেন অনেকেই। আনন্দঘন সময় কাটাবেন সেখানে। পার্কের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে পার্ক।
ওয়েভপুল, লেজি রিভার, টিউব স্লাইড, ওয়াটারপুলসহ বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দঘন সময় কাটাতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
ফয়েস লেকের তত্ত্বাবধায়ক মো. বাহার উদ্দিন জানান, লেকের চারপাশে থাকা উচু-নিচু পাহাড়ি টিলা ও গাছাপালা সাজানো হয়েছে। যেখানে ছুটে আসা মানুষ নিশ্চিত প্রশান্তি অনুভব করবে।
সিনেমা হল:
ঈদে সিনেমা হলে মুক্তি পাবে নতুন ছবি। আধুনিক সিনেপ্লেক্স গুলোতে হলিউডের বিখ্যাত মুভি দেখানো হবে।
এসবের বাইরে সিনেমা প্যালেস, আলমাসেও সাতদিন ধরেই চলবে নতুন ছবি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান জানান, ঈদের মিলন মেলার বিষয়টি মাথায় রেখে ইতোমধ্যে নগরীর দর্শনীয় স্থানসমুহকে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ এমনিতে ভ্রমন পিপাসু। ঈদের নামাজের পর দিনের অর্ধেক সময় সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত সময় কাটালেও বিকেল থেকে দর্শনীয় স্থানসমুহে ভিড় জমাবে।
এ কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিএমপির সার্বিক প্রস্তুতি ও সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ঈদের দিনে নগরীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমুহে যাতে মানুষের মিলন মেলা বসতে পারে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন রকম ব্যাঘাত না ঘটে সেভাবে পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। আশা করছি এসব স্থানের মিলন মেলায় কোন রকম ব্যাঘাত ঘটবে না।
জেএন/রাজীব প্রিন্স