বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি সপ্তাহের শেষে দু’দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে (২১ ও ২২ জুন) ভারতে আসছেন বলে দিল্লিতে সরকারি সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় এই সফরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও না হলেও এর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন বলেও জানা যাচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অফিস থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সফরের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রতিনিধি দলে কারা থাকবেন, সেই তালিকাও দিল্লির কাছে পাঠানো হয়েছে।
মাত্র দিন দশেক আগেই (৯ জুন) ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে টানা তৃতীয়বারের মতো শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। মোদি সরকারের এই তৃতীয় মেয়াদে প্রথম যে বিদেশি অতিথি রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লিতে পদার্পণ করছেন, তিনি শেখ হাসিনা। গত মাসে ভারতের নির্বাচনের মাঝপথেই ঢাকায় গিয়ে তাকে এই সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াটরা।
এর আগে নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও দিন কয়েক আগেই দিল্লি থেকে ঘুরে গেছেন শেখ হাসিনা, তখন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। ফলে একই মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার দিল্লিতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এই সোনালি যুগে অস্বাভাবিক না হলেও নজিরবিহীন তো বটেই!
এই সফরে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রতিনিধি দলে কারা থাকবেন—কূটনৈতিক রীতি অনুযায়ী সেই তালিকাও দিল্লির কাছে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকার একটি প্রতিলিপি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। আর তাতে এমন বেশ কিছু নাম আছে, যা কৌতূহলের উদ্রেক করবে। যেমন—বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের আসাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং বেশ বিরলও বটে।
এছাড়া লক্ষণীয় হলো, বাংলাদেশের ইকোনমিক রিলেশনস (অর্থনৈতিক সম্পর্ক) বিভাগের সচিব মহ. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকিও এই সফরের প্রতিনিধি দলে থাকছেন।
গত জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর তার বর্তমান মেয়াদে ‘ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি’ যে খুবই গুরুত্ব পাবে, সে ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ কূটনীতিবিদ এ এইচ মাহমুদ আলীকে অর্থমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেওয়ার মধ্যেও সেই পদক্ষেপেরই ছাপ ছিল। এখন দিল্লি সফরের প্রতিনিধিদের নামের তালিকা থেকেও একই ধরনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
দিল্লিতে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ডলারকে পাশ কাটিয়ে কীভাবে রুপি-টাকায় বাণিজ্যিক লেনদেন আরও বাড়ানো যায়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ঋণগুলো পরিশোধের সময়সূচি ‘রিশিডিউল’ করার ক্ষেত্রে ভারত কীভাবে সাহায্য করতে পারে এবং ভারত বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ঋণ বা লাইন অব ক্রেডিট কীভাবে বা কোন শর্তে দিতে পারে—সে বিষয়গুলো নিয়ে এই সফরে আলোচনা হবে বলে তারা ধারণা করছেন।
এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা থাকছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—পাওয়ার ডিভিশনের (বিদ্যুৎ বিভাগ) সিনিয়র সচিব মহ. হাবিবুর রহমান, রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহম্মদ হুমায়ুন কবীর, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (সেনাবাহিনী) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বাহিনীর অপারেশনস ও প্ল্যান ডিরেক্টরেটের কর্নেল মহম্মদ তরিকুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক এটিএম রকিবুল হক ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও যথারীতি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।
পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ছাড়াও অন্য যে মন্ত্রী বা মন্ত্রী পর্যায়ের সদস্যরা শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লিতে আসছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম।
প্রতিনিধি দলের এই অবয়ব থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এই দ্বিপক্ষীয় সফরে অর্থনীতি, বাণিজ্য, রেল, বিদ্যুৎ ও প্রতিরক্ষা খাতে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা সম্পাদিত হতে পারে।
তবে তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে প্রস্তাবিত চুক্তি এবং ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ নতুন করে আলোচনায় উঠে এলেও বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোনও মন্ত্রী বা আমলা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে আসছেন না।
এছাড়া বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহও ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে এবারের দিল্লিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন।
এছাড়া প্রতিবারের মতোই বাংলাদেশের সিনিয়র সম্পাদক ও সাংবাদিকদের একটি দলও প্রধানমন্ত্রীর সফর ‘কভার’ করতে দিল্লিতে আসছেন।
জেএন/এমআর