কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে নিখোঁজ হয়েছেন দুই বাংলাদেশি যুবক। কাকতালীয় হলেও মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে নিখোঁজের দুটি ঘটনাই ঘটেছে কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার মার্কুইস স্ট্রিট অঞ্চলে। দুটি ঘটনাতেই নিখোঁজ যুবকদের সন্ধানে তদন্ত চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ।
গত ২৪ মে চিকিৎসা করাতে কলকাতায় এসে নিখোঁজ হন রাজশাহীর রাজপাড়া লক্ষীপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম শিহাব(২৪)। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। মা-বাবার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে কলকাতা মানসিক রোগের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন শিহাব। তার নামে লালবাজার থানায় মিসিং ডায়েরি হয়েছে, তবে এখনও তাকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। শিহাবের পরিবার উঠেছিলেন মার্কুইস স্ট্রিট সংলগ্ন কলিং স্ট্রিটের শামীমা হোটেলে।
শিহাবের বাবা শফিকুল ইসলাম কাঁদতে কাঁদতে জানান, ২২ মে চিকিৎসার কারণে কলকাতায় এসেছিলাম। ২৪ মে ছেলে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। থানায় মিসিং ডায়েরি করেছিলাম। স্থানীয় সিসি টিভি ফুটেজেও দেখতে পাই ছেলে হোটেল থেকে একা বের হয়ে রাস্তার দিকে যাচ্ছে। এরপর কিছু জানি না। প্রায় একমাস হয়ে গেল। আর পারছি না। ছেলেকে নিয়েই দেশে ফিরতে চাই।
একইভাবে গত ১৮ জুন মা-বাবার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে কলকাতা আসেন পাবনার বাসিন্দা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। ১৯ জুন রাতেই হঠাৎ হোটেল থেকে দেলোয়ার উধাও হন। এরপর ২০ জুন দিবাগত রাতে পরিবারের পক্ষে কলকাতা পার্ক স্ট্রিট থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে মার্কুইস স্ট্রিটের পারামাউন্ট হোটেলে।
এ ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে দেলোয়ারের পরিবার। এ বিষয়ে দেলোয়ারের বোন কামরুন্নাহার অমি জানান, আমার ভাই নার্ভের সমস্যায় আক্রান্ত। সে কিছুক্ষণ পরপরই সবকিছু ভুলে যায়। সহজেই কোনো কিছু মনে রাখতে পারে না। যে কারণে আমরা গত ১৯ জুন কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা করাই।
তিনি বলেন, ১৯ জুন রাতে আমি ও আমার স্বামী হোটেলের এক রুমে ছিলাম। পাশের রুমে ভাইকে নিয়ে বাবা-মা ছিলেন। রাত ১১টায় আমার বাবা-মা দেখতে পান হোটেলের রুমের দরজা খোলা। ঘরের মধ্যে ভাই নেই। সঙ্গে সঙ্গে হোটেলের নিচে আসি। সেই রাতেই পথে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। সেই রাতে না পেয়ে পরের দিন পার্ক স্ট্রিট থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করি।
কামরুন্নাহার অমি বলেন, ১৯ জুন রাতেই হোটেল সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায় দেলোয়ার রাত ১১টা ২৭ মিনিটে হোটেল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। খুব চিন্তায় আছি। ভাইকে সাত ঘণ্টা অন্তর অন্তর ওষুধ খেতে হয়। না হলে ভাইয়ের কথা আটকে যায় খাবারও গিলতে পারে না। কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।
কলকাতা পুলিশের প্রতি আস্থা রেখে অমি বলেন, পার্ক স্ট্রিট থানার পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর লালবাজারও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে আমাদের।
যদিও দুটি ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷ তবে কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের পক্ষে জানানো হয়েছে, তারা সব ঘটনাই পুলিশকে জানিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রেখে চলছে।
জেএন/এমআর