বদলে যাচ্ছে বিসিএস পরীক্ষা

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার পদ্ধতি ও মূল্যায়নে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা থেকে শুরু হবে এর বাস্তবায়ন। নতুন পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষার উত্তর লিখতে হবে প্রশ্নের ক্রমানুসারে। পরীক্ষকেরা লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখবেন রাজধানীতে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) কার্যালয়ে বসে।

- Advertisement -

পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন গত বৃহস্পতিবার এসব পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ৪৬তম বিসিএস লিখিত থেকে পরীক্ষাপদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে অন্যতম—লিখিত পরীক্ষায় উত্তরগুলো প্রশ্নের ক্রমানুসারে লেখা, যা প্রশ্নপত্রে স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ যদি ৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর আগে লিখতে চান, তাহলে এর জন্য খাতায় নির্দিষ্ট জায়গা রেখে দিতে হবে। কোনোভাবেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশ্নের ক্রম লঙ্ঘন করা যাবে না।

- Advertisement -google news follower

৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় গত ৯ মে। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ৬৩৮ জন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী আগস্টে। নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে তাঁদের সবার খাতা পিএসসি কার্যালয়েই দেখবেন পরীক্ষকেরা।

পিএসসির চেয়ারম্যান জানান, লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য একেকটি দলে ১৩-১৪ জন জনবল থাকবেন। একজন ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দেখবেন, অন্যজন ২ নম্বর দেখবেন। এভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দেখা হবে। পরীক্ষকদের কারও কোনো ভুল হলো কি না, তা দেখার জন্যও সেখানে আলাদা পরীক্ষক থাকবেন। এখানে প্রধান পরীক্ষকও থাকবেন। ফলে খাতা দেখার জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরীক্ষকের প্রয়োজন হবে না। সবকিছু ধারাবাহিকভাবে যাচাই-বাছাই হয়ে চূড়ান্ত হবে।

- Advertisement -islamibank

নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষকদের খাতা দেখার আগে প্রশ্নের উত্তরপত্রও সরবরাহ করা হবে। এ ক্ষেত্রে গণিত ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া হবে। আর বর্ণনামূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য উত্তরের গঠন দেওয়া হবে।

এমন পদ্ধতি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা কেন—এ প্রশ্নে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি চালু হলে খাতা দেখার মান বৃদ্ধি পাবে এবং সময়ও বাঁচবে। একই সঙ্গে একেকজন পরীক্ষক একেকভাবে দেখার সুযোগও পাবেন না। সব মিলিয়ে এক বছরে একটি বিসিএস কার্যক্রম সম্পন্ন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

পাইলটিং হিসেবে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার গণিত বিষয়ের খাতা পিএসসি কার্যালয়ে দেখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা লিখিত পরীক্ষার খাতা পিএসসি কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় দেখার পরিকল্পনা করছি। পাইলটিং হিসেবে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার গণিত বিষয়ের খাতা পিএসসি কার্যালয়ে দেখা হয়েছে। এতে মাত্র ৯ দিন সময় লেগেছে। যদিও তা ৪ দিনে হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষকদের ৬টি দলের খাতা দেখার কথা ছিল। কিন্তু পরে তা সম্ভব হয়নি। এ জন্য কিছুটা বেশি সময় লেগেছে।’

বিসিএসের প্রার্থী বাছাই করা হয় তিন ধাপে। ধাপগুলো হলো—প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। প্রথম ধাপে ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় ধাপে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা মোট ১১০০ নম্বরের (জেনারেল ও টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য) লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়।

নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বছরে একটি বিসিএসের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পিএসসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ৪৭তম বিসিএস থেকে এক বছরের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে জট কমতে শুরু করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। গত কয়েক বছরের মতো চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর বিসিএসের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

আগে এ ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ছিল। এখন তা দূর হয়েছে। আর এই বিসিএস থেকেই চাকরিপ্রার্থীদের একটি ইউনিক আইডি দেওয়া হবে। এতে এক আবেদনেই একাধিক চাকরির জন্য আবেদন করা সম্ভব হবে।

চলতি বছরই ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পরিকল্পনার কথাও জানান সোহরাব হোসাইন। তিনি বলেন, ‘৪৪তম বিসিএস পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষা চলছে। আশা করছি, আগামী আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে। এটা শেষ করার আগেই ৪৫তম বিসিএসের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে; যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিসিএসের কার্যক্রম শেষ করা যায়।

এখন এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দ্বিতীয় পরীক্ষক দেখছেন। আশা করছি, আগস্টের শেষে এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ সম্ভব হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো এ বছরই ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ। কোনো কারণে এক-দুই মাস দেরিও হতে পারে। এগুলো সবই এক বছরের মধ্যে বিসিএসের সব কার্যক্রম শেষের পরিকল্পনার অংশ।’

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বর প্রদানে গুণগতbপরিবর্তন এসেছে বলেও জানিয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল মাত্র ৯ কার্যদিবস বা ১৩ দিনে প্রকাশ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও ১৫ দিনের মধ্যেই প্রিলির ফল প্রকাশ করা হবে। আর এখন মৌখিক পরীক্ষার নম্বরও তিনটি শিটে দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি শিট ওএমআর, অন্যগুলো ম্যানুয়াল। ওএমআর শিট থেকে সফটওয়্যারে নম্বর ইনপুট দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ম্যানুয়ালিও মিলিয়ে দেখা হয়।

ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার সব কার্যক্রম ৪১তম বিসিএস থেকে অটোমেটেড হয়েছে বলে জানান পিএসসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ক্যাডার এবং পদ সিলেকশন হয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে। কোর্ডেড অবস্থায় ম্যানুয়ালি মিলিয়ে দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে কারও পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে কিছু করা সম্ভব নয়।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM