টানা চতুর্থবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে এখন ভারতে। একইসঙ্গে টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দেশটিকে কোনো সরকারপ্রধানের এটাই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
শনিবার শেখ হাসিনার সম্মানে হায়দ্রাবাদ হাউজে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন নরেন্দ্র মোদী। ওই ভোজে সবই ছিলো নিরামিষ পদ।
বাঙালি কিছু পদও ছিলো ওই খাদ্য তালিকায়। ছিলো বিরিয়ানিও। তবে সবই নিরামিষ। ছিলো গুজরাতি খাবার। স্ট্রিট ফুডও পরিবেশন করা হয় মধ্যাহ্নভোজে।
১৪ কোর্সের ওই ভোজ শুরু হয় ভারতের স্ট্রিট ফুড হিসেবে বহুল পরিচিত দই ফুচকা দিয়ে। এরপর আসে স্টু। পার্ল মিলেট (মুক্তা বাজরা) আর মটরশুটি দিয়ে তৈরি ওই স্টু’র নাম ‘মটর অর বাজরে কা সোর্বা’।
মাছের পাতুরি বাঙালির অতি প্রিয় পদ। তবে নিরামিশাষী নরেন্দ্র মোদী শেখ হাসিনার জন্য পরিবেশন করেছেন ছানার পাতুরি। ওই পাতুরিতে ছানার সঙ্গে মেশানো ছিলো নারকেল, কাঁচা আম, মরিচ আর সর্ষে বাটা। কলাপাতায় মুড়ে ভাঁপানো ওই পদ পরিবেশন করা হয় ভাতের সঙ্গে।
এরপর পরিবেশন করা হয় সিঙাড়া। সিঙাড়ার পুর হিসেবে ছিলো আলু, ফেটা চিজ, ফুলকপি, বাদাম এবং থাইম।
শেখ হাসিনাসহ অতিথিদের পাতে এরপর দেয়া হয় ‘আমারান্থ কোফতা গুলবদন’ অর্থাৎ কোফতার কারিতে সেদ্ধ করা আমারান্থ বাজরার ডাম্পলিং। আমরান্থ বাজরাকে ভারতে ‘ঈশ্বরের দানাশস্য’ হিসেবে বলা হয়। রামদানাও নামে পরিচিত এই শ্যসটি।
তারপর পাতে আসে গুজরাতি পদ ‘পঞ্চমেল নি সবজি’; অর্থ্যাৎ, জিরা, পেঁয়াজ আর টমোটা দিয়ে রান্না পাঁচমিশালি সবজি। এর পরে পাতে দেওয়া হয়, দই পনির। এই পদটি বিভিন্ন মশলায় মাখানো পনিরের স্টেক, যা টক দই এবং নানা ভারতীয় মশলায় রান্না করা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অতিথিদের হায়দ্রাবাদ হাউজের ওই ভোজে এরপর দেওয়া হয় বাঙালির অতি পরিচিত পদ শুক্তো। ছিলো মসুর ডালও। এছাড়া পরিবেশন করা হয় কলকাতা স্টাইল বিরিয়ানি। তবে তা সবজির। ছিলো নানা পদের রুটি।
শেষ পাতে ডেজার্টে ছিলো- পান রসমালাই কুলি (পান, গোলাপের পাঁপড়ি আর জাফরানের সুঘ্রাণ যুক্ত), গুড়ের জিলাপি এবং আমের কুলফির সঙ্গে ছিলো নানা রকমের ফল।
ছিলো কফি, মাসালা চা এবাং কাওয়া (গ্রিন টি)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে দেওয়া এই ভোজে ছিলো যন্ত্রসংগীতের আয়োজনও। সেখানে হিন্দুস্তানি বিভিন্ন রাগের পাশাপাশি পরিবেশন করা হয় বাংলা গানও। সরোদ, সন্তুর আর তবলায় পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেরণাদায়ী গান ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গান। গানটির গীতিকার গোবিন্দ হালদার এবং সুরকার সময় দাস।
এছাড়া দেশাত্মবোধক গান ‘সোনা, সোনা, সোনা লোকে বলে সোনা’ এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ’ পরিবেশন করা হয়।
শনিবার দুপুরে নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। দুপুরে হায়দ্রাবাদ হাউজে পৌঁছালে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান নরেন্দ্র মোদী। বৈঠক শেষে তারা যৌথ সংবাদ বিবৃতি দেন।
এর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা। যেখানে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
জেএন/এমআর