পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি করেই কোটিপতি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার চকবিজলী গ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসান। একজন পুলিশ সদস্য রাতারাতি আঙুল ফুলে শুধু কলাগাছ বনে যাওয়ায় হতবাক স্থানীয়রা। এরই মধ্যে তার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আক্কেলপুরের বাসিন্দা মেহেদী হাসান ২০০৬ সালে কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন পুলিশ বাহিনীতে। তার বিপি নম্বর-৮৮০৬১০৮৭০১। তিনি নাটোর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েই যেন হাতে পেয়ে যান আলাদীনের চেরাগ। এরই মধ্যে কোটিপতি বনে গেছেন এ পুলিশ সদস্য। তার সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক।
দুদকের তথ্যমতে, মেহেদী হাসানের নামে মোট ৯১ লাখ ২৪ হাজার ২৫৪ টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৩০ হাজার ৮৭০ টাকা। ঋণ বাদে অর্জিত সম্পদের মূল্য ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮৪ টাকা।
চকবিজলী গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, ৭/৮ বছর হলো চাকরিতে যোগদান করেছেন মেহেদী। এত অল্প সময়ে তিনি গ্রামে একের পর এক জমি কিনছেন। একজন পুলিশ কনস্টেবল এত টাকা কোথায় পায়? কীভাবে এত জমি কিনেন। প্রায় ১৫ বিঘার মতো জমি কিনেছেন বলে শুনেছি। এছাড়া প্রায় কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করেছেন। আমাদের গ্রামে অনেকেই পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। তাদের কারো তো এত উন্নতি দেখি না।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে মেহেদী হাসানের বিষয়ে আরেকজন বলেন, তিনি জমি নিয়ে অনেক জায়গাতেই ঝামেলা করেছেন। বন্ধের দিনেও সাব-রেজিস্ট্রারকে এনে টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করেছেন তিনি। সাধারণ পরিবারের সন্তান হলেও এখন গ্রামে তার পাকাবাড়ি, ধানি জমি আর ক্ষমতার দাপট তো আছেই।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মেহেদীর বিষয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। প্রাথমিক তদন্তে তার আয়-ব্যয়ে অমিল রয়েছে। এগুলো দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের সুস্পষ্ট প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে পুলিশ কনস্টেবল মেহেদী হাসান বলেন, আমরা বংশীয় পরিবার। আমার বাব-দাদার একসময় ৭০০ বিঘা জমি ছিল। তারা এগুলো করে গেছেন। যে বাড়ির কথা আলোচনা হচ্ছে সেটিও আমার বাবা নির্মাণ করেছেন। একজন কনস্টেবলের পক্ষে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব কী?
দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে হেনস্তার জন্যই এসব করানো হচ্ছে। দুদকের বিষয়টি আমি জানি না। তারা আমাকে কিছু জানায়নি।
জেএন/এমআর