প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আওয়ামী লীগের শক্তি। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। যা আমরা প্রমাণ করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারুক, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
রোববার (২৩জুন) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ‘প্লাটিনাম জুবিলি’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। একজন রাজনীতিবিদের জীবনে সংগঠন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি সংগঠন শক্তিশালী হয় এবং দেশের গণমানুষের সমর্থন পাওয়া যায়, তাহলে যতই ষড়যন্ত্র হোক কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। হ্যাঁ মৃত্যু যে কোনো সময় হতে পারে। সে জন্য আমি কখনোই ভীত নই। কখনো ভয় পাই না, পাব না। কারণ যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমার বাবার যে চিন্তা চেতনা, তা বাস্তবায়ন করে এদেশের মানুষদের একটা উন্নত জীবন দেব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। পরিবারগুলো কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু তারা এই সংগঠন ধরে রেখেছে। কাজেই যেভাবে সংগঠন করতে হবে, সেভাবে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস, যেটা আমাদের মূল শক্তি সেটা অর্জন করতে হবে। কারণ এ আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই বারবার জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকে আর্থ সামাজিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এটা ধরে রেখেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
স্বাধীনতার স্থপতিকে হত্যার পর বাংলাদেশ শুধু পিছিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের পর বারবার ক্ষমতা বদল হয়েছে। ক্ষমতা বদল হয়েছে হয় অস্ত্রের মাধ্যমে, না হয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। জনগণের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা; কোনো ভাগ্যই তারা পরিবর্তন করতে পারেনি। নিজেদের বিলাসিতা, অর্থ সম্পদ বানানো, অর্থ পাচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুনখারাবি, অস্ত্রের ঝনঝনানি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি; এটা ছিল তাদের কাজ। ওই অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিপথে নিয়ে ওখানেই তারা ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে তারা। তারা ভুলে গেছে জনগণের শক্তি অপরিসীম। তাই ৯৬ সালে সরকারের এসে আমরা অনেক কিছু করেছিলাম। ওই সময় বাংলাদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করতে পেরেছিল, একটি দলের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর যখন জাতির পিতা ফিরে আসেন পাকিস্তানি কারাগার থেকে, তখন এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই তিনি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই মোতাবেক সময় পেয়েছিলেন মাত্র তিন বছর ৭ মাস। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, শোষিত বঞ্চিত দরিদ্র মানুষের হাহাকার, ওই অবস্থায় দেশকে গড়ে তুলে তিনি মাত্র তিন বছরে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। এত কম সময়ে এত উন্নতি পৃথিবীর কোনো দেশ করতে পেরেছিল কি না আমি জানি না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেটি করতে পেরেছিলেন। কারণ এই সংগঠন তার পাশে সবসময় ছিল। যুদ্ধের পর বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছানো, রিলিফ পৌঁছানো, হেঁটে, নৌকায় করে এই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই করেছে। তারা গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এরপর ২১ বছরের ইতিহাস পেছনে চলে যাওয়ার ইতিহাস। বঞ্চনার ইতিহাস। ক্ষুধার্ত নর-নারীর হাহাকার আর দুর্ভিক্ষের ইতিহাস। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের ইতিহাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ আস্থা রেখেছিল আওয়ামী লীগের ওপর। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এরপর বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার পালা। আমরা যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব, তা করেছি। দারিদ্রের হার কমিয়েছি। আমরা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে কাজ করেছি, তাতে দেশ মর্যাদা পেয়েছে।
তিনি বলেন, আজ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে কিন্তু তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। আর আমি বড় সন্তান হিসেবে পাশে থেকে জেনেছি তার স্বপ্ন। কীভাবে তিনি বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চান। সব ফেলে ফিরে এসেছিলাম এমন এক দেশে, যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন আমার বাবা, তা বন্ধ করে দিয়ে তাদের মুক্ত করে দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দেয় জিয়াউর রহমান। ১৫ আগস্টের আত্ম-স্বীকৃত খুনিদের বিচারে ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটে সভা মঞ্চে আসেন। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
পরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে সাংস্কৃতিক আয়োজন। এতে গান, নৃত্য ও নানা পরিবেশনায় উঠে আসে আওয়ামী লীগের পথ পরিক্রমা আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আয়োজনে দলটির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভা শুরু হওয়ার আগে পবিত্র কোরআনসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।
সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আসা সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান তিনি।
সভায় জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের, ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ইতালি, সৌদি আরব, ডেনমার্ক, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, স্পেন, মিয়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, ভিয়েতনাম, সুইডেন, ওমান তুরস্কসহ ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা মঞ্চে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ঢাকা সিটি মেয়র, ঢাকার দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
জেএন/এমআর