বউ ভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশাযোগে বরের বাড়ি যাচ্ছিলেন কনে পক্ষের লোকজন।
মাইক্রোবাসে ছিলেন সোহেল খানের স্ত্রী রাইতি খান আর ছোট্ট শিশু সাবরিনসহ পুরো পরিবার। পথে মাইক্রোবাসটি একটি ব্রিজে উঠতেই হঠাৎ ভেঙে খালে পড়ে যায় গাড়ি।
না ফেরার দেশে পাড়ি দেন সাবরিনের মা রাইতি খানসহ ৯ জন। তবে অলৌকিকভাবেই বেঁচে গেছে ছোট্ট শিশু সাবরিন।
শনিবার দুপুরে বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মাঝামাঝি হলদিয়া ব্রিজ ভেঙে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
বেঁচে যাওয়া শিশু সাবরিনের বাবা সোহেল খান জানান, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসে ছিল সাবরিন ও তার মা রাইতি। লোহার সেতু ভেঙে মাইক্রোবাসটি যখন নদীতে ডুবে যাচ্ছিল তখন রাইতি কোল থেকে সাবরিনকে খালের ওপর ভাসমান কচুরিপানার মধ্যে ফেলে দেয়।
পেছনে একটি অটোরিকশায় সোহেলসহ দুইজন আত্মীয় ছিলেন। তারাও পানিতে ডুবে যাচ্ছিলেন। সোহেল কোনোভাবে সাঁতরে ওপরে উঠে আসতেই দেখেন কচুরিপানার ওপর সাবরিন। সঙ্গে সঙ্গে কচুরিপানার ওপর থেকে মেয়েকে উদ্ধার করেন তিনি।
সোহেল খান বলেন, ‘এভাবে আমার সবকিছু কেড়ে নিল আল্লাহ! ছোট মেয়েটাকে নিয়ে আমি এখন কীভাবে বাঁচব?’
জানা যায়, কনে বাড়ি আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন থেকে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছেলে বাড়িতে বউ ভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশাযোগে যাচ্ছিলেন কনে পক্ষের লোকজন।
এ সময় উপজেলার ৫ নম্বর চাওড়া ইউনিয়ন এবং ৪ নম্বর হলদিয়া ইউনিয়নের সংযোগ সেতু হলদিয়া ব্রিজ ভেঙে একটি মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা পড়ে যায় নদীতে। এসময় মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা দুই শিশুসহ ৯ নারী নিহত হন।
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ভেঙে পড়া ফুটওভার ব্রিজ সম্পর্কে জানান, হালকা যান (ফুটওভার ব্রিজ) প্রকল্পের আওতায় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৮৫ মিটার এই লোহার সেতুটি নির্মিত হয়েছিল।
প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ বছর আগে নির্মিত সেতুটিতে চলাচলে সতর্কতা নোটিশ টানানো ছিল।
সেতুটির দুই প্রান্তেই গাছে সতর্কীকরণ নোটিশ টানানো রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ।’ সেটি উপেক্ষা করার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জেএন/পিআর