চট্টগ্রাম শহরের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া হালদা নদীতে গত এক সপ্তাহে মারা গেছে ৫টি রুই জাতীয় মা মাছ ও একটি ডলফিন। মাছ ও ডলফিনের এই মৃত্যুর মিছিল বঙ্গবন্ধু হ্যারিটেজ ঘোষিত দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্রের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার (৩০ জুন) সকালে ভেসে উঠলো আরো একটি কাতলা মাছ। রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকা থেকে মৃত কাতলাটি উদ্ধার করা হয়। যার ওজন ১৯ কেজি ৩০০গ্রাম।
এর আগে গত ২২ ও ২৬ জুন দুটি বড় মরা কাতলা ও রুই মাছ ভেসে উঠেছিল উরকিরচরের বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায়। ২৬ জুন নদীর গড়দুয়ারা পয়ন্টে পাওয়া যায় মৃত একটি ডলফিন। শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে যে দুটি মৃত কাতলা মাছ পাওয়া গেছে সেগুলো ভেসে উঠেছিল হাটহাজারীর মাদার্শা কুমারখালী এলাকায়। জানা যায়, মরে ভেসে উঠা সব মাছের ওজন ১০ থেকে ১৫ কেজি।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নদী দূষণ, মাছ শিকারের জন্য বিষ প্রয়োগ, রাবার ড্যামে জমে থাকা রাসায়নিক ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি এবং মা মাছ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদার জৈব বৈচিত্র ধ্বংসের পথে। এ কারণে হালদায় মা মাছ ও ডলফিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসোর্চ সেন্টারের গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, হালদা নদীতে বিগত দুই বছর পরে কয়েকদিনের ব্যবধানে পাঁচটি মা মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু ঘটেছে। যা অস্বাভাবিক একটি ঘটনা। সেই সঙ্গে হতাশাজনক বিষয় হলো ২০১৬ সালের পর হালদা নদীতে এ বছর সবচেয়ে কম পরিমাণ ডিম দিয়েছে, যা পরিমাণে নমুনা ডিমের চেয়ে একটু বেশি। হালদা তীরের দুই উপজেলা রাউজান ও হাটহাজারীর শাখা খালসমূহের দূষণের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় এবং বিষ প্রয়োগে মাছ মারার প্রবণতা বৃদ্ধিই এর অন্যতম কারণ।
তিনি জানান, রাউজান উপজেলার সর্তা খালের উজানে ছিপাতলী, তেলপারই খালের মুখ, পেশকারহাট এলাকায় পেশাদার বড়শি দিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব এলাকায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্যথায় বঙ্গবন্ধু হ্যারিটেজ ঘোষিত দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী রক্ষা করা যাবে না।
হালদা রক্ষার ব্যাপারে ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, এই নদী রক্ষায় বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই বিপর্যয় রোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কারণ উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে তিনি নদীর মা মাছ রক্ষায় নদীর পানিকে দূষণমুক্ত করতে না পারায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের ব্যর্থতাকেও দায়ি করেছেন।
তবে মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণের জন্য ১২ কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের কাতলা মাছটি হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এটি উদ্ধারের একদিন আগে আরও একটি ১২ কেজি ওজনের মরা কাতলা মাছ নদীতে ভেসে এলে সেটিও ডাঙায় তুলে মাটি চাপা দেয় স্থানীয়রা।
জানা গেছে, এ নিয়ে গত সাড়ে পাঁচ বছরে হালদা থেকে ৪১টি মৃত ডলফিন উদ্ধার হয়।
জেএন/হিমেল/এমআর