ভারতের উত্তর প্রদেশ হাথরসের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর মিছিল আরও বড় হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠান শেষে পদদলিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১২১ জনের।
আহত হয়েছেন আরো অনেকে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায় নারায়ণ সাকার হরির একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে ঘটনার পরের দিন সকালেই ওই ধর্মীয় গুরুর আশ্রমে নারায়ণ সাকার হরি ওরফে সাকার বিশ্ব হরি ওরফে ভোলেক বাবার খোঁজে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরাট দল।
কিন্তু ধর্মগুরুর সন্ধান এখনও মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। খবর এনডিটিভি।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, হিন্দুদের দেবতা শিবের পূজা উপলক্ষে হাথরসের রতি ভানপুর গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে লোকজন সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করলে পদদলিত হয়ে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
আলীগড় রেঞ্জের পুলিশের মহাপরিদর্শক সলভ মাথুর বুধবার সকাল পর্যন্ত ৭ শিশুসহ কমপক্ষে ১২১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী। আহত অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
আজ বুধবার ঘটনাস্থলে যেতে পারেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। প্রশাসনের এক আধিকারিক সূত্রে এমনটাই খবর পাওয়া গিয়েছে।
এই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন আগরার অতিরিক্ত ডিজিপি।
পুলিশ সূত্রে খবর, ফুলরাই গ্রাম থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে মৈনপুরী এলাকায় আশ্রম রয়েছে ভোলেবাবার। পদপিষ্টের ঘটনার পর সেই আশ্রমেই গিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যেরা। প্রশাসনের নির্দেশ, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের যেন কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।
হাথরসের ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আলোচনা শুরু হয়েছে এই বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় আয়োজক সৎসঙ্গ কমিটিকে দায়ী করছেন অনেকে।
অনেকে প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন। আবার অনেকের দাবি, আগত ‘ভক্ত’দের হুড়োহুড়ির কারণেই এই ঘটনা।
হাথরসের জেলা প্রশাসক আশিষ কুমার সাংবাদিকদের বলেন, অতিরিক্ত জনসমাগমের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আলিগড় শহরের বিভাগীয় কমিশনার চৈত্র ভি বলেন, অনুষ্ঠানের সময় সেখানে ছিল তীব্র গরম।
গরমে অতিষ্ঠ মানুষজন অনুষ্ঠান শেষে পানির জন্য একযোগে ছোটাছুটি শুরু করেন। এতে কাদাপানিতে একজনের ওপর অন্যজন পড়ে আহত হন। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অনেকের।
ভোলে বাবা দাবি করেন, তিনি একসময় ভারতের গোয়েন্দা বিভাগে (আইবি) চাকরি করতেন। ২৬ বছর আগে ধর্ম পালনের জন্য তিনি সেই সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন বলে দাবি তার।
বর্তমানে ভোলে বাবার লাখো অনুসারী রয়েছে। ভারতজুড়ে তাঁর অনুসারী ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন। তবে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখন্ড, রাজস্থান ও দিল্লিতে ভোলে বাবার অনুসারী বেশি।
জেএন/পিআর