২০১৬ সালে একটি প্রকল্পে এসএসসি পাশ করা প্রায় ৪ হাজার নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব মাঠকর্মীরা কাজে যোগদানের পর থেকে নিয়মিতভাবে সাধারণ মানুষের সেবা দিয়ে আসছে।
তারা নববিবাহিত দম্পতি, গর্ভবতী মা, গর্ভকালীন সেবা, প্রসবোত্তর সেবা, স্যাটেলাইট ক্লিনিকে ক্লায়েন্ট রেফার ও সেবা দেওয়ার সহযোগিতা করা, ইপিআই কার্যক্রম, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, হাম-রুবেলা ভ্যাকসিন প্রদানে সহযোগিতা ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশনে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে।
কিশোর-কিশোরীদের সেবা ও পরামর্শ দেওয়া, শিশু রোগীদের সেবা ও পরামর্শ দেওয়া, স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভবতী মায়েদের তালিকা হালনাগাদ করা, জন্ম-মৃত্যুর তালিকা হালনাগাদ করা ও প্রদান করা, উঠান বৈঠকের আয়োজন করা ও সচেতনতামূলক পরামর্শ নেওয়া, কোভিড-১৯ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, সক্ষম দম্পতিদের ও যুব দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ নিশ্চিত করা, যুব দম্পতিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ায় এসব মাঠ কর্মীদের কাজ।
তাছাড়া প্রদত্ত রেজিষ্টারে নিয়মিত আপডেট করা, নিয়মিত প্রতি মাসে রিপোর্ট প্রদান করাসহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন কেউ কেউ।
সারা দেশব্যাপী মরণ ব্যাধি কোভিড-১৯ এর দুর্যোগকালীন সময়েও এসব মাঠকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সকল দম্পতিসহ বিদেশফেরত প্রবাসীদের তালিকা সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছে।
নিয়মিতভাবে পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়েছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনাকালীন সময়ে অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছে, এমনকি বিভিন্ন উপজেলায় মারাও গেছেন।
বিগত ৯ বছরের অধিক সময় ধরে চাকরি করে আসা এদের মধ্যে বর্তমানে অনেকেই বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা এমনকি কর্মরতদের অধিকাংশের ইতিমধ্যে চাকরির বয়স অতিক্রম হয়েছে। কর্মরতদের অনেকের একমাত্র অবলম্বন এই চাকরি। এই টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলে।
তবে গত ২৩ জুন থেকে এসব নারী কর্মীদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। এদিন তারা জানতে পায় জুন মাসে তাদের কাজ শেষ হওয়ার কথা। আগামী মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে তাদের চাকরি থাকবে না।
এ খবরে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেন। এবং চাকরি পুনর্বহাল রাখার দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে প্রতিদিনই ঘেরাও ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন প্রকল্পভিত্তিক কাজে নিয়োজিত দেশের প্রায় ৪ হাজার নারী কর্মী।
চাকরি থেকে বাদ না দেওয়ার দাবিতে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই নারীরা ছোট ছোট সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে অধিদপ্তরের সামনে ১০ দিন ধরে বসে আছেন।
মানববন্ধনে আসা কর্মীরা বলেন, হঠাৎ করে অধিদপ্তর থেকে আমাদের চাকরি থেকে অব্যাহতির নোটিশ দেওয়া হয়। আমাদের আগে জানানো হয়নি। ২০১৬ সাল থেকে আমরা চাকরি করে আসছি। বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছি মানুষকে।
নারী কর্মীরা বলেন, আমাদের দিয়ে সব কাজ করিয়ে আবার আমাদেরকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। আমরা মোট ৩ হাজার ৬৮৬ জন কর্মী কর্মরত আছি। আমাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হোক। চাকরিতে আমাদের পুনর্বহাল করা হোক।
আমরা যারা বিগত ৯ বছরের অধিক সময় ধরে চাকরি করে আসছি তাদের অধিকাংশের সংসার চলে এ চাকরির টাকায়। আমাদের সন্তানাদিসহ পরিবারের লোকজনদের দেখাশোনা ও পরিচালনার দায়িত্ব অনেকাংশে আমাদের উপর নির্ভর।
আমরা যে বেতন পাই তাতে আমাদের পরিবারের ভরণপোষণ করতে খুবই কষ্ট হয় এবং অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। যদি আমাদের চাকরি না থাকে তাহলে আমরা না খেয়ে মরবো।
তাই আমাদের কার্যক্রমের সফলতার সার্বিক দিক সুবিবেচনা করে এবং আর্থিক কষ্ট লাঘব করার জন্য বিভাগীয় কাজের স্বার্থে আমাদের আর্থিক দুরবস্থার কথা সুবিবেচনা করে আমাদের চাকরি পুনর্বহাল রাখার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে অনুরোধ করছি।
এতগুলো কর্মী বেকার হয়ে যাচ্ছে? জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন গণমাধ্যমকে জানান, ‘এই কর্মীদের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে দেখব, তাদের ব্যাপারে কি করা যায়।
জেএন/পিআর