দ্বিপক্ষীয় সফরে স্পেনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটির সরকারপ্রধান পেদ্রো সানচেজের আমন্ত্রণে আগামী ২১ থেকে ২২ জুলাই স্পেন সফর করবেন তিনি। প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় সফরে মাদ্রিদ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। সফরটিকে ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের বৃহত্তর যোগাযোগের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘এর আগে প্রধানমন্ত্রী বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে স্পেন সফর করেছেন। এবারই প্রথম তিনি দ্বিপক্ষীয় সফর করছেন। ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তৈরির ক্ষেত্রে এই সফর বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি।’
স্পেনের সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ আরও বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। স্পেনেরও এ বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক অঙ্গনে স্থিতিশীলতা, শান্তি প্রতিষ্ঠা, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়েও কাজ করতে চায় দুই দেশ—ওই কূটনীতিক জানান।
সফরের উদ্দেশ্য
প্রধানমন্ত্রীর সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা। এ বিষয়ে আরও একজন কূটনীতিক বলেন, ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হচ্ছে স্পেন। দেশটির সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য। এর মাধ্যমে সমগ্র ইইউতে বাংলাদেশের যে স্বার্থ আছে সেটি আরও ভালোভাবে রক্ষা করা যাবে।’
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে বাংলাদেশে লাভবান—এই তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছর ওই দেশে রফতানি করেছি ৩৭০ কোটি ডলারের পণ্য। অন্যদিকে আমদানি করেছি প্রায় ২২ কোটি ডলারের পণ্য। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর আমরা জোরও দেবো।’
বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্পেন থেকে সরাসরি বিনিয়োগ কম। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে স্পেনের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আগ্রহ আছে। অন্তত দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে এসব কোম্পানি অংশগ্রহণ করেছে বা এখনও করছে।’
অভিবাসন
স্পেন অভিবাসনবান্ধব দেশ। ওই দেশে প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে ওই কূটনীতিক বলেন, ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে ইতালির পরে স্পেনেই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি থাকে। এর কারণ হচ্ছে দেশটি অত্যন্ত অভিবাসনবান্ধব এবং সেখানে অভিবাসীদের কাজ করে টিকে থাকার সুযোগ বেশি।’
ছয় বছর ধরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য একটি প্রক্রিয়া (রিটার্ন কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) চলমান আছে। ইইউর অনেক দেশ অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠালেও স্পেন থেকে অবৈধ বাংলাদেশি ফেরত পাঠানোর একটি অনুরোধও পায়নি বাংলাদেশ, তিনি জানান।
রাজনৈতিক সম্পর্ক
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইউরোপের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার উদ্যোগ নেয়।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ইইউর সঙ্গে দাতা-গ্রহীতা সম্পর্ক ছিল। সময়ের পরিক্রমায় গত ১৫ বছর ধরে তারা সেই সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়ে উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে বিকশিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ওই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর প্রয়াস নেয় এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির দিকে জোর দেয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ করার জন্য দুই পক্ষ থেকে অনেক সফর হয়েছে।’
গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাসেলস, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন। অন্যদিকে গত বছর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঢাকা সফর করে গেছেন। এসব সফর ইউরোপে রাজনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে চলমান স্থিতিশীলতা ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে যে ভূমিকা রেখেছে, সেটিকে সবাই স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দেয় এবং ইউরোপও এর ব্যতিক্রম নয়।’
জেএন/এমআর