প্রতিবছর মে-জুন এলেই গ্রাহকরা এমন ভোগান্তিতে পড়েন। প্রিপেইড মিটারেও ঘটছে এমন ভূতুড়ে বিলের ঘটনা। গ্রাহকদের অভিযোগ, দুই মাস থেকে প্রিপেইড মিটারে অতিরিক্ত টাকা কাটা হচ্ছে।
এ ছাড়াও প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকরা নানা অভিযোগ তুলছেন। বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বিক্ষোভও করছেন। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়িয়েছে।
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, প্রিপেইড মিটার নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।
জানা গেছে, ভোগান্তি কমানোর কথা বলে চালু করা বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার এখন অনেক গ্রাহকের ‘গলার কাঁটা’য় পরিণত হয়েছে। তাদের অভিযোগ, দুই মাস ধরে মিটারে রিচার্জ করলে টাকা থাকছে না, বাড়তি টাকা কেটে নিচ্ছে কোম্পানিগুলো।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ডিপিডিসির এক গ্রাহক জানান, মার্চে তাঁর প্রিপেইড মিটারে খরচ হয় ৭০০ টাকা, এপ্রিলে তা বেড়ে হয় ১ হাজার ২০০ টাকা এবং মে মাসে খরচ হয় ১ হাজার ৮০০ টাকা।
অথচ এই তিন মাস বিদ্যুতের ব্যবহার একই রকম ছিল বলে দাবি তাঁর। শেওড়াপাড়ার এক গ্রাহক জানান, তাঁর প্রিপেইড মিটারে রিচার্জের সময় আগের ব্যালান্স যোগ হচ্ছে না।
প্রিপেইড মিটারের ব্যালান্স শেষ হয়ে গেলে জরুরি ব্যালান্স হিসেবে ২০০ টাকা নেওয়া যায়। এই টাকা ফেরত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহককে ৫০ টাকা সুদ হিসেবে দিতে হয়। অথচ বিইআরসির নির্দেশনা রয়েছে, জরুরি ব্যালান্সে কোনো সুদ নেওয়া যাবে না।
তবে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে রিচার্জে। আগে রিচার্জ করতে ২০ ডিজিট (সংখ্যা) মিটারে প্রবেশ করাতে হতো। কয়েক মাস ধরে ২২০ থেকে ২৪০টি ডিজিট মিটারে প্রবেশ করাতে হচ্ছে। একসঙ্গে এত ডিজিট প্রবেশ করাতে গিয়ে ভুল হচ্ছে।
আর কয়েকবার ভুল হলে মিটার লক হয়ে যাচ্ছে। তখন দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে গ্রাহককে। মিটার আনলক করতে অনেক এলাকায় টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা।
ডেসকোর এক নির্বাহী পরিচালক গণমাধ্যমকে জানান, ‘নিয়মের বাইরে বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়া, স্ল্যাব পুনর্বিন্যাস ও গরমে ব্যবহার বাড়ায় বিল বেশি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘৪০০ ইউনিট পর্যন্ত আবাসিকে প্রতি ইউনিট ৮ টাকার মতো, ৪০১ ইউনিট হলে তা সাড়ে ১২ টাকার ওপরে চলে যায়।
এ কারণে মাসের মাঝখান থেকে বেশি টাকা কাটা শুরু করে। নিজে মিটার কিনলেও প্রতি মাসে মিটার ভাড়া কাটে বিতরণ কোম্পানিগুলো।’
প্রিপেইড মিটার নিয়ে অভিযোগ তদন্তে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১২ জুন বিচারপতি মো. মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারের বিল আদায় ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনাসহ কয়েকটি নির্দেশনা চেয়ে গত ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবীর পক্ষে রিট আবেদন করেন আব্দুল্লাহ আল হাদী।
আবেদনে বলা হয়, প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার চালু থাকা সত্ত্বেও ভোক্তাদের অতিরিক্ত চার্জ ও গোপন চার্জ দিতে হয়। বিদ্যুতের বিল আদায় ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এসব বিষয় পর্যালোচনা ও সংস্কার প্রয়োজন।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে; শিগগির আবার বসব। সূত্র-সমকাল