জাতীয় চ্যাম্পিয়ন নীড়, উৎসর্গ গুরু জিয়াকে

অনলাইন ডেস্ক

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের বিদায়ের ২৪ ঘন্টা হয়নি। এরই মধ্যে আজ বিকেল চারটায় জাতীয় দাবায় শেষ রাউন্ডে ফিদে মাস্টার নীড় রাজবাড়ীর অমিত বিক্রমের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ফেডারেশন জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গতকালের অসমাপ্ত ও শেষ রাউন্ডের খেলা দুই-তিন দিন স্থগিত করেছে। নীড় আগামীকাল দুপুরে কলম্বোতে দু’টি টুর্নামেন্ট খেলতে যাবেন তাই আজ শুধুই নীড়ের বোর্ডের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

- Advertisement -

শোকের পরিবেশে আজ নীড়-অমিত খেলা বেশিক্ষণ গড়ায়নি। কয়েক মিনিট পরই দুই জন ড্র মেনে নিয়ে খেলা শেষ করেছেন। এতে ১৩ রাউন্ড শেষে নীড় ১০ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে শীর্ষস্থানে। অন্য প্রতিযোগিদের ১০ পয়েন্ট অর্জন করা সম্ভব নয় ফলে নীড়ের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ নিশ্চিত হয়েছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে নবম শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থী জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ নিয়ে পুরো ক্রীড়াঙ্গনে আলোড়ন তুলবে। কিন্তু আকস্মিক জিয়া চলে যাওয়ায় সবই এলেমেলো।

- Advertisement -google news follower

মাত্র ১৪ বছর বয়স হলেও জীবনবোধ অনেকটাই প্রগাণ নীড়ের। তাই চ্যাম্পিয়নের কোনো উচ্ছাসই নেই তার মধ্যে, ‘একটুও আনন্দ লাগছে না। স্যার আমাদের রেখে চলে গেলেন। খুবই খারাপ লাগছে, চ্যাম্পিয়নের কোনো স্বাদই নেই। আমার এই চ্যাম্পিয়নশীপ স্যারকে উৎসর্গ করলাম। ’

গতকাল ১২তম রাউন্ডে নীড় দেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদের সঙ্গে ড্র করে বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে অনলাইনে অন্য বোর্ডের খেলা দেখছিলেন। হঠাৎ দেখেন সব স্থগিত। মনে করেছিলেন হয়তো ট্যাকনিক্যাল সমস্যা কিন্তু জিয়া নেই এটা মানতেই পারেননি, ‘আমি যখন আসি তখন দেখলাম উনি খেলছেন। অনলাইনে ভাবলাম কোনো সমস্যায় চাল আপডেট হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর শুনলাম স্যার নেই খেলা স্থগিত। কোনো কিছুই মেলাতে পারছিলাম না।’

- Advertisement -islamibank

নিয়াজ মোর্শেদ ১৩ আর জিয়াউর রহমান ১৪ বছর বয়সে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। নীড়ের অফিসিয়াল বয়স ১৪ হলেও প্রকৃত অর্থে ১৪ পেরিয়েছে। এই জাতীয় দাবা মূলত নীড়ময়। একটি আন্তর্জাতিক নর্ম পেয়েছেন আবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েই তৃপ্ত থাকতে চান না নারায়াণগঞ্জের এই দাবাড়ু–, ‘আমি প্রথমেই বলেছি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। জাতীয় চ্যাম্পিয়নের মাধ্যমে সেই পথযাত্রা মাত্র শুরু করলাম।’

জাতীয় দাবায় সর্বশেষ আসরের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব। তার শ্রেষ্ঠত্ব কেড়ে নিলেন ১৪ বছরের ফিদে মাস্টার মনন রেজা নীড়। আজ দাবা ফেডারেশনে নীড়ের খেলা শেষে অভিনন্দন জানিয়ে রাজীব বলেন, ‘সে অত্যন্ত প্রতিভাবান সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। এই চ্যাম্পিয়নশীপের মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হল। সঠিক নির্দেশনা ও সহায়তা পেলে সে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারবে। ’

বাংলাদেশের দাবাড়ুদের মধ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবই একমাত্র বিশ্বকাপ দাবায় দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছিলেন। আর সবাই প্রথম পর্বেই বিদায়। সেই দেশ থেকে একজন ১৪ বছর বালকের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অবাস্তব কল্পনাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে। তবে নীড়ের যুক্তি,‘ পার্শ্ববর্তী ভারতে গুকেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে, প্রজ্ঞানন্দও বিশ্বের সেরা পর্যায়ের। আমারও সেই রকম লক্ষ্য। ’

নারায়ণগঞ্জের ফিলোসোশিয়া স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়েন নীড়। নানা ধাপ পেরিয়ে জাতীয় দাবায় অংশগ্রহণ করতে হয়। আরো বছর পাঁচেক আগেই তিনি জাতীয় দাবায় নাম লিখিয়েছেন। পাঁচ বছরের মধ্যেই দেশের সেরা দাবাড়ু হলেন। এই সাফল্যের জন্য মা মৌমন রেজা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটুকে অবদান দিলেন, ‘মা অনেক কষ্ট আমাকে এখানে এনেছে। মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। এরপর টিটু আঙ্কেল (বিসিবি পরিচালক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক) বিভিন্ন টুর্নামেন্টে বিমান টিকিট দিয়ে সহায়তা করেন। এজন্য এত কম সময়েই এই সাফল্য পেয়েছি। ’

মনন রেজা নীড় বাংলাদেশের দাবার নতুন সম্ভাবনার নাম। ১৪ বছর বয়সে চ্যাম্পিয়ন হলেও তার দৃষ্টিতে থাইল্যান্ডের একটি টুর্নামেন্টই এখন পর্যন্ত সেরা পারফরম্যান্স, ‘কয়েক মাস আগে থাইল্যান্ডের টুর্নামেন্টে আমি জিএম নর্ম অর্জনের কাছাকাছি ছিলাম। পারফরম্যান্সের বিচারে সেটাই ছিল সেরা।’

এই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে তিন জন গ্র্যান্ডমাস্টার, তিন জন আন্তর্জাতিক মাস্টারকে পেছনে ফেলে ফিদে মাস্টারের চ্যাম্পিয়ন হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। নীড় অবশ্য এতটা জটিলভাবে ভাবতে চাননি, ‘আসলে চাপ নেইনি, চাপ নিলে খেলা খারাপ হয়। স্বাভাবিক খেলাই খেলেছি, এতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।’

দীর্ঘদিন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের দাবায় শীর্ষ রেটিংধারী ছিলেন। গত কয়েক মাস জিয়ার স্থান নিয়েছেন ফাহাদ ও নীড়। ২৪৪৫ রেটিং দিয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ শুরু করা নীড় আগামী দুই বছরের মধ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চান, ‘বেশি বেশি বিদেশের টুর্নামেন্ট খেলতে পারলে দুই বছরের মধ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া সম্ভব।’

নীড়ের মা মৌমন ছেলের জাতীয় চ্যাম্পিয়নের চেয়ে নর্ম অর্জনেই বেশি খুশি। তিনি বলেন, ‘জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হবে সত্যিকার অর্থে ভাবিনি। অলিম্পিয়াড দলে থাকুক সেটাই চেয়েছিলাম। তবে নীড় বলেছিল সে চ্যাম্পিয়ন হবে। সে যেটা বলে করতে পারে। চ্যাম্পিয়নের চেয়েও নর্মটা গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। একটি নর্ম অর্জন করতে বিদেশ যেতে হয়। এতে অনেক সময় ও খরচ। এই টুর্নামেন্টে নর্ম হওয়ায় খানিকটা স্বস্তি।’

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM