কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার জালিয়াখালী এলাকার বাসিন্দা হলেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাজালিয়া ইউনিয়নের বড়দুয়ারা খৈয়াখালী এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন মফিজুর রহমান (৫৬) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী জুবায়দা বেগমকে (৩০)।
পেশায় তারা ঘটক হলেও স্বামী-স্ত্রী মিলে পেতেছেন অভিনব এক প্রতারণার ফাঁদ। যেটি কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়াসহ আশপাশের এলাকার গরিব ও নিরীহ বিবাহযোগ্য মেয়েদের কৌশলে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করায় মূলত ঘটক দম্পতির পেশা।
বুধবার এক অভিভাবক তার মেয়েকে নিয়ে প্রতারক চক্রের খপ্পড়ে পড়ার অভিযোগ নিয়ে থানায় এলে প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়।
বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় বাজালিয়া ইউনিয়নের বড়দুয়ারা খৈয়াখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এ প্রতারক দম্পতিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।।
এসময় তাদের কাছ থেকে একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন তরুণীর নগ্ন ছবি পাওয়া যায়।
থানা সূত্রে জানা গেছে, মফিজুর ও তার স্ত্রী জুবাইদা ঘটক পরিচয়ে গরিব ও নিরীহ বিবাহযোগ্য মেয়েদের অভিভাবকের সঙ্গে বিয়ের কথা বলেন।
পরে বিবাহযোগ্য মেয়েদের সঙ্গে পাত্রের মোবাইলের মাধ্যমে কথা বলার অজুহাতে সুকৌশলে মেয়েদের নম্বর নিয়ে নেন। এরপর পাত্রের ভাই-ভাবী সেজে মুঠোফোনে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
এভাবে কথা বলার এক পর্যায়ে তারা বলেন, মেয়ের শরীরে কোনো দাগ বা তিল থাকতে পারবে না। গায়ে এমন কোনো কিছু নেই তা প্রমাণে বিবাহযোগ্য মেয়েরা মফিজুর-জুবাইদার কাছে আসলে তারা সুকৌশলে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নেয়। এরপর শুরু হয় প্রতারণা। এভাবে তারা গরিব-অসহায় মেয়েদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
তাছাড়া কারো কারো ক্ষেত্রে ধারনকৃত নগ্ন ছবি নিজেদের হেফাজতে রেখে পাত্র-পাত্রীর সম্পর্কটা একটু গভীর হওয়ার জন্য সময় নিতো।
ঘনিষ্ঠতা বাড়লে নগ্ন ছবির কথা প্রকাশ্যে এনে নানা অজুহাতে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কথা বলে টাকা আদায় করা হতো। এভাবে কয়েক দফায় তারা টাকা আদায় করে। আর টাকা না দিলে নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমমি দেওয়া হয়।
লাজলজ্জার ভয়ে একাধিক পরিবার প্রশাসনের কাছে মুখ না খুললেও বুধবার থানায় এসে এক ভুক্তভোগীর বাবার অভিযোগে এসব তথ্য উল্লেখ করেন।
পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দীন বলেন, ঘটক সেজে স্বামী-স্ত্রী মিলে শত শত বিবাহ যোগ্য মেয়ে ও তাদের পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করেন আসছে।
এত দিন কোনো অভিভাবক তাদের সন্মানের ভয়ে থানায় অভিযোগ করেননি। বুধবার এক অভিভাবক অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযানে নেমে এক দিনের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করেছে।
পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, গ্রামের সহজ সরল মেয়েদের বিয়ের কথা বলে নগ্ন ছবি তোলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করায় এ প্রতারক দম্পতির মূল পেশা।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছে। তারা জানায়, শরীরে তিল বা দাগ নেই, এমনটি প্রমাণ করতে এলে কৌশলে মেয়েদের নগ্ন করে ছবি ও ভিডিও করতো। এরপর প্রত্যেক মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতো।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) প্রতারক স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের পর পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এরপর তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে জানালেন পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন।
জেএন/পিআর