চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনজন নিহত ও আরও ৮ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত দুজন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। অপরজনকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
নিহতদের মধ্যে একজন কলেজ শিক্ষার্থী, একজন দোকান কর্মচারী ও অপরজন পথচারী। এদের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে।
তারা হলেন- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম। তার বাড়ি বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়। নিহত আরেকজন ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী ফারুক। তার বাড়ি কুমিল্লায়। নিহত পথচারী ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন।
তিনি বলেন, মুরাদপুরে সংঘর্ষে হাসপাতালে নিয়ে আসা ১১ জনের মধ্যে দুজন আগেই মারা গেছে। আহত ৯ জন চমেকের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
চমেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নুজহাত ইনু বলেন, হাসপাতালে দুইজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। এর মধ্যে ফারুক নামে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। সন্ধ্যার দিকে মৃত ঘোষণা করা ব্যক্তির মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, সারা দেশের মতো চট্টগ্রামে আজ সকাল থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল সোমবার সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিকেল ৩টায় চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।
বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে নগরের মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট এবং ষোলশহর আশপাশের এলাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু হয়।
এতে চট্টগ্রাম কলেজের এক শিক্ষার্থীসহ ৩জন নিহত হন। ষোলশহর শিক্ষা বোর্ড এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। মুরাদপুর অংশে অবস্থান নিয়েছে কোটা আন্দোলনকারীরা।
সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহতদের একজন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী, আরেকজন পথচারী। দুজনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রয়েছে।
উল্লেখ্য, চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। এবার সেই আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
জেএন/এমআর