কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সরকারদলীয় সংগঠনের কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
এতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩জন, ঢাকায় দুজন ও রংপুরে একজনসহ মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রাম:
আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত দুজন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। অপরজনকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
নিহতদের মধ্যে দুজন কলেজ শিক্ষার্থী ও অপরজন দোকান কর্মচারী।
তারা হলেন- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম। তার বাড়ি বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়।
একজনের নাম ফয়সাল আহমদ শান্ত। তিনি এম.ই.এস কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি বরিশাল। আরেকজন ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী ফারুক। তার বাড়ি কুমিল্লায়।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন।
তিনি বলেন, মুরাদপুরে সংঘর্ষে হাসপাতালে নিয়ে আসা ১১ জনের মধ্যে দুজন আগেই মারা গেছে। আহত ৯ জন চমেকের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
চমেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নুজহাত ইনু বলেন, হাসপাতালে দুইজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। এর মধ্যে ফারুক নামে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। সন্ধ্যার দিকে মৃত ঘোষণা করা ব্যক্তির মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, সারা দেশের মতো চট্টগ্রামে আজ সকাল থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল সোমবার সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিকেল ৩টায় চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।
বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে নগরের মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট এবং ষোলশহর আশপাশের এলাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু হয়।
এতে চট্টগ্রাম কলেজের এক শিক্ষার্থীসহ ৩জন নিহত হন। ষোলশহর শিক্ষা বোর্ড এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। মুরাদপুর অংশে অবস্থান নিয়েছে কোটা আন্দোলনকারীরা।
সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহতদের একজন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী, আরেকজন পথচারী। দুজনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রয়েছে।
ঢাকা :
রাজধানীতে ঢাকা কলেজের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। আজ বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে ঢাকা সিটি কলেজের সামনে থেকে একজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকালে ও সন্ধ্যায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিটি কলেজের সামনে একজন পড়ে ছিলেন। স্থানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে পপুলার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর।
এছাড়াও ঢাকা সিটি কলেজের সামনে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে যাকে আনা হয়েছে, কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
রংপুর :
দুপুর আড়াইটার দিকে রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত হন। আবু সাইদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টায় রংপুর খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং ফটকের সামনে আসেন।
এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
উল্লেখ্য, চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। এবার সেই আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
জেএন/পিআর