বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা। রাজধানীর পোস্তগোলায় বাসের অপেক্ষায় করছেন শত শত মানুষ। ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর আসছে একটি-দুটি বাস। সেই বাসেও যাত্রীতে ঠাসা। দরজার হাতল ধরে ঝুলে আছে অনেকে। মোড়ে অপেক্ষারত মানুষ যে ঝুলে কোনোভাবে বাসে উঠবে সেই সুযোগও নেই। হঠাৎ কেউ নেমে পড়লে দু-একজন দৌড়ে উঠলেও অনেকে ‘ব্যর্থ হয়ে’ ফিরে আসছেন। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের শুরুতেই রাজধানীতে এমন বাস সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও গন্তব্যে যেতে বাস না পেয়ে সকালেই দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে এমন বাস সংকট দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে রাজধানীর জুরাইন, পোস্তগোলা, পল্টন, রামপুরা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে শত শত মানুষ। মাঝেমধ্যে দু-একটি বাস এলেও সেগুলো যাত্রীতে পরিপূর্ণ। বিভিন্ন স্থানে দু-একজন নেমে গেলেও হুড়োহুড়ি করে উঠছে অনেক বেশি। অনেকে বাসে উঠতে পারবে না এমন আশঙ্কা থেকে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হন। আবার কেউ কেউ রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশায় করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এজন্য তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
পোস্তাগোলা মোড়ে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো অপেক্ষার পরও বাসে উঠতে না পারা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আসাদ জানান, প্রায় ২৫ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি, বাসে উঠতে পারছি না। যেসব বাস আসছে, তার সবই যাত্রীতে পূর্ণ। কোনোভাবে যে ঝুলে বাসে উঠব, সেই সুযোগও নেই।
আসাদ আরও বলেন, যে দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে সরকারের উচিত তাদের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করা।
দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওইসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।
এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এরপর থেকেই সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভ করেন কোটাবিরোধীরা। ঢাবি ছাড়াও বিক্ষোভ হয় জাবি, জবি, রাবি, সাত কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কলেজে।
এরমধ্যে গত মঙ্গলবার দিনব্যাপী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন।
পরিস্থিতির যেন আরও অবনতি না হয় সেজন্য দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করলেও সেই সিদ্ধান্ত না মানেননি অনেক শিক্ষার্থী।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে গণপরিবহন কম দেখা গেছে রাজধানীর সড়কে।
জেএন/এমআর