মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেল অপারেশনের জন্য কোনো বীমা করেনি। তাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ক্ষতির ঘটনার জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ মিলবে না বলে জানিয়েছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) মুখপাত্র ও পরিচালক জাহাঙ্গীর শাহ। আইন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানের বীমা করে থাকে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন।
পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা বীমার আওতায় আনা হলেও মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে জানিয়েছেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।
কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ প্রজেক্ট চলাকালে বীমা করেছিল। কিন্তু মেট্রোরেল অপারেশনকে বীমার আওতায় আনেনি। যেহেতু অপারেশনকে বীমার আওতায় আনা হয়নি, তাই কোনো রকম ক্ষতিপূরণ পাবে না। বীমা করা থাকলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যেত। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন (এসবিসি) সবসময় সরকারি স্থাপনা এবং ঝুঁকি যেখানে আছে, সেখানে বীমা করার জন্য তাগিদ দেয়। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক জায়গায় ঝুঁকি থাকার পরও বীমা করে না। বিদেশে সব রকম স্থাপনা বীমার আওতায় আনা হয়।
২০১৯ সালের বীমা আইন বলছে, সরকারি সম্পত্তি অথবা সরকারি সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট কোনো ঝুঁকি বা দায় সম্পর্কিত সকল প্রকার নন লাইফ বীমা ব্যবসায় ১০০ শতাংশ করবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। এরপর এ ব্যবসা থেকে ৫০ শতাংশ নিজের কাছে রেখে বাকি ৫০ শতাংশ সব বেসরকারি নন লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে সমহারে বণ্টন করবে।
আইনে আরও বলা হয়েছে, সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ কিংবা সংরক্ষণ রক্ষণাবেক্ষণের দায় সরকারের। এ ছাড়া সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনো কোম্পানি, খামার, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা অন্য কোনো স্থাপনার বীমা সাধারণ বীমা কর্পোরেশন করবে। তবে সরকারি সম্পত্তি বীমার আওতায় আনার বাধ্যবাধকতা রেখে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন এখনো নেই।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় মেট্রো লাইনের নিচের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সেই আগুনের মধ্য দিয়েই ট্রেন ছুটে যায়। পরে জননিরাপত্তার স্বার্থে ওইদিন বিকেল সাড়ে ৫টার পর মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু পরদিন ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, মূল স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ওইদিন পল্লবী ও মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশনেও হামলা হয়।
মেট্রোরেলের ক্ষতি নিরূপণে অতিরিক্ত সচিব মো. জাকারিয়াকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এখনো পূর্ণাঙ্গ হিসাব শেষ করেননি। তবে প্রাথমিক হিসাবে ক্ষতির অঙ্ক ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে কর্মকর্তাদের ধারণা।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ যাত্রী যাতায়াত করত।
জেএন/এমআর