সিলেটের ভোলাগঞ্জ স্টেশনের ফাঁড়িতে হামলা-লুটপাট, বাহিনী হিসেবে সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া, বন্ধ নিয়োগ-পদোন্নতি চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, গত সোমবার ভোলাগঞ্জ স্টেশনে নিরাপত্তা বাহিনীর ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে অস্ত্র ও গুলি লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে বেশ কয়েক সদস্য আহত হন। এ ঘটনা জানাজানি হলে নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার বিকাল থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে তাদের এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাহি হেলাল উদ্দিন বলেন, ভোলাগঞ্জে হামলার ঘটনায় সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ছাড়া আমরা বাহিনী নাকি কর্মচারী সেটি এখনো স্পষ্ট করা হয়নি। বাহিনী হলে সে হিসেবে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। এসব দাবিতে আমরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ভোলাগঞ্জ স্টেশনে লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আরএনবি সদস্যদের যেসব দাবি আছে সেগুলো আমাকে জানিয়েছে। তিনি বলেন, পদোন্নতি ও নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। ঝুঁকিভাতা ও রেশনভাতা নিয়ে আদালতে রিট করা হয়েছে; ফলে সেটি আদালতে নিষ্পত্তি হবে।
যেসব দাবি নিয়ে তারা দেশের বিভিন্ন স্টেশনে অবস্থান করে তা হচ্ছেঃ
১। স্থায়ীভাবে ভোলাগঞ্জ সার্কেল অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং দপ্তরাদেশ জারী করতে হবে।
২। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন- ২০১৬ অনুযায়ী কর্মচারী না বাহিনী তা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং যদি বাহিনী হলে তাহলে বাহিনীর সকল সুযোগসুবিধা (রেশন, ঝুঁকি ভাতা, যাতায়াত ভাতা) সহ অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৩। নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করে প্রতিবছর নিয়োগ কার্যক্রম অব্যহত রাখতে হবে এবং তিন বছর পর পর পদোন্নতি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বাহিনীর নীতিমালা অনুযায়ী নিজস্ব তত্তাবধানে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
৪। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যাক্তিবর্গগণ, বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক, মহাব্যবস্থাপক এবং সকল সরকারী বাহিনী ও নিজস্ব উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ব্যাতিত অন্য কোন সিভিল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে কোন আদেশ বা প্রটোকল ডিউটিতে নিয়াজিত থাকবে না।
৫। হেডকোয়ার্টার ব্যাতিত বিশেষ ডিউটিতে বাহিনী নিজস্ব যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৬। রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন, ২০১৬ মোতাবেক। পূর্বের ন্যায় মামল রুজু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যেক সার্কেলের ব্যারাক সমূহ সংস্কার এবং সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে।
৮। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের আট কর্মঘন্টা নির্ধারণ করতে হবে। আট ঘন্টার যদি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে তার পরিবর্তে অতিরিক্ত কর্মঘন্টার ভাতা প্রদান করতে হবে।
৯। অন্যান্য বাহিনীর ন্যায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে।
১০। বংলাদেশ রেলওয়ে সকল সম্পত্তি রক্ষাণাবেক্ষন এবং রেলওয়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল বাহিনীতে রুপান্তর করতে হবে।
১১। সিজিপিওয়াই, পাহাড়তলী কারখানা, পাহাড়তলী স্টোর, সিজিএমওয়াই ইত্যাদি কেপিআইভুক্ত এলাকা সমূহের ক্যারেজ ফিটিং এর কোন মালামালের চার্জ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বুঝে নিবে না। কারণ তারা এই সমস্থ মালামাল সম্পর্কে অবগত নয়।
১২। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সকল সদস্যের কর্মবিরতি ও দাবী আদায় প্রসঙ্গ নিয়ে কোন প্রকার বিভাগীয় বদলী ও হয়রানী করা যাবে না।
এদিকে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সকল সার্কেলের আরএনবির সদস্যরা চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। কোনো স্থাপনায় গতকাল তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেননি। রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ কোনো স্টেশনে আরএনবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন না করায় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পরে রেলের সকল স্থাপনাসহ সকল ট্রেন।
সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের আরএনবি প্রধানসহ বাহিনীর অন্যান্য শীর্ষ কমকর্তাদের নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে ভিআইপি রেস্ট হাউজে বৈঠকে বসেন।
বৈঠক শেষে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের (আরএনবি সদস্যদের ) কিছু দাবি–দাওয়া ছিল। আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি। দাবি গুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে। দাবি গুলো আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে দেবো। তাদেরকে যার যার স্থানে দায়িত্ব পালনে চলে যেতে বলেছি। তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করছেন। তারা তাদের স্থানে (যে যার দায়িত্ব পালনের স্থানে) চলে যাবেন।
বৈঠকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) প্রধান জহুরুল ইসলাম, কমান্ড্যান্ট মো. রেজওয়ান–উর–রহমানসহ অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমান্ড্যান্ট মো. রেজওয়ান–উর–রহমান বলেন, আমাদের আরএনবির সদস্যরা তাদের কিছু দাবি নিয়ে কর্মবিরতি পালন করেছেন। তাদের দাবি গুলো নিয়ে রাতে ডিআরএমসহ আমাদের পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) প্রধান জহুরুল ইসলাম স্যারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে উনারা আরএনবি সদস্যদের দাবি গুলোর ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ–আলোচনা করে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। তারা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। তাদেরকে নিজ নিজ স্থানে দায়িত্ব পালনের জন্য চলে যেতে বলেছেন।
জেএন/এমআর