জার্মানির হ্যামিলন শহর। আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাতশ বছর আগের কথা। ক্যালেন্ডারে তখন ১২৮৪ সাল। ছোট্ট, সাজানো, সুন্দর শহর হ্যামিলন৷ শহরের মানুষের খুব দুঃখ৷ সেখানে ভয়ঙ্কর উপদ্রব ইঁদুরের। যেন ইঁদুর বন্যা। হাজারে হাজারে ইঁদুর৷ এখানে সেখানে৷ একদিন ইঁদুরের উপদ্রব থেকে ত্রাণকর্তা হিসেবে শহরে আসেন এক বাঁশিওয়ালা।
যার বাঁশির ফুঁতে ছিল অচেনা সুর। কেউ শোনেনি সেই সুর আগে। যার আকর্ষণে বেরিয়ে আসে শহরের সব ইঁদুর। সুরের সম্মোহনে পাগল করে ইঁদুরগুলোকে নদীতে নিয়ে অদৃশ্য করে রক্ষা করেছিলেন পুরো শহরকে।
ঠিক একইরকম একজন বাঁশিওয়ালা আছেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। যার হাতে বাঁশি না থাকলেও যার কণ্ঠের ঐক্যের সুরে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন চট্টগ্রামের পুরো আওয়ামী লীগ পরিবার। দলবেঁধে নেমেছেন নৌকার বিজয়ের জন্য।
কে সেই বাঁশিওয়ালা? নাম তাঁর আ জ ম নাছির উদ্দীন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নৌকার বিজয়ের জন্য অবিরাম ছুটে চলেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরের ছয়টি আসনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলার ১০টি আসনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চান তিনি। শুধু নগর বা জেলা নয়, নৌকার বিজয়ের জন্য ছুটে গেছেন ফেনী ও কক্সবাজার জেলায়ও। অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন জনসভায়।
আজ চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু মেয়র নাছির তাঁর অভাব বিন্দুমাত্র বুঝতে দিচ্ছেন না ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে। নওফেলের পাশে অভিভাবক হিসেবে পাশে থেকে তিনি পালন করে যাচ্ছেন পিতার দায়িত্ব। ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। কেন্দ্র অনুযায়ী ভোটার তালিকা বিতরণ থেকে শুরু করে নির্বাচনের সবকিছুই করছেন মেয়র নাছির। কোনদিন সকালে কিংবা কোনদিন বিকেলে আবার কোনদিন দুই বেলাই নওফেলকে নিয়ে নির্বাচনি গণসংযোগে যাচ্ছেন নাছির।
অবিরাম চলার এই পথে যেন তাঁর ক্লান্তি নেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগর কিংবা গ্রাম এ আসন থেকে ওই আসন। সবখানে একই ব্যক্তি। পথিমধ্যে গাড়িতে কাঁধ এলিয়ে হয়তো একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন। আবার নিতে না পারলেও যেন দুঃখ নেই। ছুটে চলায় বিরতি নেই। তিনি হচ্ছেন চট্টগ্রামের প্রিয় মেয়র নাছির উদ্দীন।
উপরের কথাগুলো বলছি একটি কারণে, সেটি হচ্ছে চট্টগ্রামে আমরা আগে কখনো দেখিনি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে একসঙ্গে নৌকার প্রচারণায় নামতে। তাছাড়া আওয়ামী লীগকে এত শৃঙ্খলার সাথে দিনরাত পরিশ্রমও করতে দেখিনি। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন সব জায়গায় চলছে সুশৃঙ্খল প্রচারণা। প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারকা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্রসমাজ, সুশীল সমাজ, সংস্কৃতিকর্মীরা।
অবশ্য তা সহজে হয়নি। এর পেছনে সময় ও শ্রম দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। ইতিমধ্যে নৌকার প্রচারণার জন্য ছাত্রলীগের ছয়টি টিম করে দিয়েছেন। যারা রাস্তায় প্রচারণার পাশাপাশি ব্যস্ত আছেন ডোর টু ডোর গণসংযোগেও। অন্যদিকে নৌকার প্রচারণায় নেমেছেন চট্টগ্রামের ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকরাও।
রোববার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে ছয়টি আসনে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালান তারা।
এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর গাড়িবহর চট্টগ্রাম-৯ আসনে নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পক্ষে প্রচারণা চালায়।
সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম-৪ এ দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম-৫ এ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও চট্টগ্রাম-১১ আসনে এম এ লতিফের পক্ষে প্রচারণা চালান।
সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদের গাড়িবহর প্রচারণা চালিয়েছে চট্টগ্রাম-৮ আসনে।
নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের গাড়িবহর চট্টগ্রাম-১০ আসন এলাকায় প্রচারণা চালায়। সবখানেই ছিল ঐক্যের সুর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের একজন সেবক। সেবক হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নগরের ছয়টি আসনের পাশাপাশি চট্টগ্রামের মোট ১৬টি আসন উপহার দিতে চাই। তাই এই অবিরাম ছুটে চলা। দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি কাজ করে যাচ্ছি। তাই আজকে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার জন্য মাঠে নেমেছেন।
মেয়র বলেন, ‘শেখ হাসিনার হাতে দেশ নিরাপদ। কারণ মানুষ বিএনপি-জামায়াতের কর্মকাণ্ড ভোলেনি। গত দশ বছরে আমরা এমন উন্নয়ন সাধন করেছি, যার ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। শেখ হাসিনা একজন সফল ও মমতাময়ী নেত্রী। তিনি এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। পুনরায় সরকার গঠন করলে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করবেন। তাই নৌকার বিজয়ের বিকল্প নেই।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটে চলেন, ক্লান্তবোধ করেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে মেয়র হেসে জয়নিউজকে বলেন, ‘আমার কাছে দলের কমিটমেন্ট সবার আগে। ছাত্র রাজনীতি থেকে অনেক ত্যাগ ও শ্রমের মাধ্যমে আজকে এখানে এসেছি। কম সংগ্রাম করতে হয়নি। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ করছি। তাই কোন পরিশ্রমই আমাকে ক্লান্ত করতে পারছে না। আমার একটিই টার্গেট সেটি হচ্ছে নৌকাকে বিজয়ী করা।
হ্যামিলিন শহরের গল্পটি রূপকথা হলেও সারা পৃথিবীজুড়ে এর রয়েছে বাড়তি কদর। এমনকি জার্মানিতে এ সংক্রান্ত একটি জাদুঘরও রয়েছে। ওই জাদুঘরে সঞ্চিত পঞ্চদশ শতাব্দীতে লেখা কয়েকটি বইয়ে এ রহস্যময় কাহিনীর বর্ণনাও আছে।
বিবদমান আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি হয়ে মেয়র নাছির যে ঐক্যের বাঁশিতে ফুঁ দিয়েছেন, সেটিও থেকে যাবে চট্টগ্রামের রাজনীতির স্মারক হিসেবে। বিশেষ করে, নওফেলের পাশে থেকে যেভাবে আ জ ম নাছির প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাতে রাজনৈতিক মহল বলতে বাধ্য হচ্ছে, পিতা হারানো নওফেল নির্বাচনের মাঠে পাশে পেয়েছেন নগরপিতাকে, রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবে।