সাংবাদিকদের সাথে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির মতবিনিময়

অনলাইন ডেস্ক

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান পরবর্তী চট্টগ্রামের সর্বশেষ পরিস্থিতি বিষয়ে সোমবার (১২ আগস্ট) বিকাল ৩ টায় নগরীর লালখান বাজারস্থ পিটস্টপ রেষ্টুরেন্টের হলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময়ের আয়োজন করা হ‌য়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। এতে তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

- Advertisement -

লিখিত বক্তব্যে এরশাদ উল্লাহ বলেন, দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে ছাত্র জনতা মিলে স্বৈরাচারি দুঃশাসনের বিরদ্ধে যে অভূতপূর্ব সংগ্রাম গড়ে তুলেছেন, অনেক রক্ত ও ত্যাগতিতিক্ষার বিনিময়ে সেই সংগ্রাম পূর্ণতা পেয়েছে। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের আপামর ছাত্র জনতা অসাধ্য সাধন করেছেন। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। অভূতপূর্ব এক জনবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। গত ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের কারণে দেশের ছাত্র জনতার মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, এ জনবিস্ফোরণ তারই বহিঃপ্রকাশ। এ গণঅভূত্থান আবারও প্রমাণ করল যে, জনগণের শক্তির কাছে কোনো স্বৈরশাসকই টিকে থাকতে পারে না। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ফ্যাসিবাদের অক্টোপাশ থেকে মুক্ত হয়েছে। শত শত ছাত্র জনতার প্রাণের বিনিমযে বাংলাদেশ আজ আবার নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি, এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।

- Advertisement -google news follower

তিনি বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনের অবসানের পর গনতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রায় একটি গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মানের প্রত্যাশায় জাতি যখন ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখনি পতিত স্বৈরাচারের সক্রিয় দোসররা পর্দার অন্তরাল থেকে দুর্বৃত্ত আর সুবিধাবাদীদের ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, দখলদারি, হামলা, লুটতরাজের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির অপকর্মে মেতে উঠেছে। এর বহুমাত্রিক কুমতলবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিজয়ের সুমহান অর্জনকে ম্লান করা, আর গণহত্যা, দুর্নীতি ও লুটপাটের দায় থেকে রক্ষা করার পরিবেশ সৃষ্টি। সর্বত্র ভয় আর আতংকের পরিশের সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে ভুণ্ডুল করা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার লক্ষ্যে সমাজকে বিভক্ত করাই এই মুহূর্তে তাদের ষড়যন্ত্র। জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করার অপচেষ্টায়ও তারা মরিয়া হয়ে ওঠেছে। একইসঙ্গে এসব ঘৃণ্য অপরাধের দায় সুকৌশলে বিএনপির উপরে চাপানোর জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু মহান আল্লাহর রহমত আর জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় কুচক্রি মহলের এ অপচেষ্টা প্রাথমিক ভাবে সফল হয়নি।

তিনি বলেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ ধরনের গণ বিপ্লব পরবর্তী কিছু বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয় না। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, যেভাবে আশংকা করা হয়েছিল তার ছিটেফোটাও সংঘটিত হয়নি। বিএনপি সহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিকদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভাই বোনদের সক্রিয় পদক্ষেপ আর নবগঠিত অন্তবর্তী সরকারের যথাসাধ্য প্রয়াসে দেশ বড় ধরনের বিশৃংখলা ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে।

- Advertisement -islamibank

তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, দেশের অন্যান্য স্থানের মত চট্টগ্রামেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য পতিত স্বৈরাচারের দোসররা নানা ধরনের জঘন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। প্রতিবেশী একটি দেশের কতিপয় গণমাধ্যম কর্তৃক অব্যাহত অপপ্রচার আর উস্কানীর সাথে পতিত হাসিনা সরকারের এ দেশীয় এজেন্টরা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থানের অনুকূল পরিবেশ তৈরীর জন্য সাম্প্রাদায়িক কার্ড নিয়ে মাঠে নেমেছে। পতিত সরকারের সময়ও তারা এ কার্ড ব্যবস্থা করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সহায় সম্পত্তি লুট করেছিল। আর এখন রাজনৈতিক পুনবার্সনের পথ নিষ্কন্টক করতে শান্তিপ্রিয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মিছিল সমাবেশে ছাত্রলীগ যুবলীগের চিহ্নিত খুনী সন্ত্রাসীদের সংখ্যালঘুর মুখোশে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নৈরাজ্য ও আতংক সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তাদের সরকার পতন হলে ২-৫ লাখ নেতাকর্মী খুন হবে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শান্তিতে দেশে থাকতে পারবেনা বলে জুজুর ভয় দেখিয়ে ফ্যাসিবাদ পাকাপোক্ত করার অপকৌশল গ্রহণ করেছিল।

কিন্তু দেশবাসী ও পুরো বিশ্ব দেখলো, গণবিপ্লব পরবর্তী এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি বরং বিএনপিসহ আলেম ওলেমা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভাইয়েরা রাত জেগে সংখ্যালঘুদের পাড়া মহল্লা, মন্দির পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের নিরাপত্তাহীনতার শংকা দূরীভূত করার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অব্যাহত ভাবে হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপনা পরিদর্শন, ধর্মীয় নেতাদের সাথে সৌজন্য বৈঠক করে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। এ অভূতপূর্ব অসম্প্রদায়িকতা ও আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির নজির দেশ বিদেশে অকুণ্ঠ প্রশংসা পাচ্ছে। হিন্দু ধর্মীয় নেতারা এবং পুরোহিতরা আমাদের এসব প্রয়াসের উচ্চসিত প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, তারা এ পর্যন্ত কোন ধরণের হামলা বা আক্রমনের শিকার হননি। লক্ষ লক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী খুন আর সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে পুরোদেশ কুরুক্ষেত্র বানানোর আওয়ামী অপকৌশল ব্যর্থ হবার পর এখন এ পতিত শক্তি চিহ্নিত খুনীদের জড়ো করে শান্তিপ্রিয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নানা ব্যানার ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা আর গণবিপ্লবের মহান লক্ষ ব্যর্থ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাময়িক অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় মধ্যরাতে চিৎকার চেচামেচির মাধ্যমে ডাকাতি হামলার ঘটনা ঘটানোর পায়তারা করছে। দলীয় পরিচয়ে সন্ত্রাস, খুন খরাবিসহ নানা অপরাধ অপকর্ম করে অপরাধের দায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে আনার “ডাবল আইডেনটিটি” আইনের দৃষ্টিতে যেমন অগ্রহণযোগ্য, তেমনি অপরাধের যারা ভিকটিম তারাও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের এ অপকৌশল মেনে নেবে না।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসামপ্রদায়িকতার ক্ষেত্রে বিশ্বে অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের সকল নাগরিকের পরিচয় একটাই আমরা বাংলাদেশী। কখনো সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলে কোন কিছুতে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা এও আশ্বস্থ করতে চাই যে, পরিস্থিতির উত্তরনের পর একটি গনতান্ত্রিক সরকার গঠন হলে বিগত ১৫ বছর ধরে আওযামী লীগ ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা সংস্যালঘু ভাইদের যে সহায় সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখল-লুটপাট করছে তাদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে। একই সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ স্বেচ্চাসেবক লীগের নেতৃত্বে যারা ছাত্র জনতা হত্যা নির্যাতনের অভিযুক্ত চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসিরা যে ধর্মের পরিচয়ই বহন করুক না কেন তারা স্বস্ব অপরাধের দায় থেকে সাম্প্রদায়ীকতার কার্ড ব্যবহার করে কোন ভাবেই রেহাই পাবে না।

এরশাদ উল্লাহ বলেন, ইতিমধ্যেই পুলিশ প্রশাসন সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। সেজন্য আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে আমরা অতীতের মত আওয়ামী দানবীয় পুলিশ বাহিনী চাইনা। আমরা চাই, মানবীয় পুলিশ প্রশাসন। যারা দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকবে এবং পুলিশের আইন অনুযায়ী পুলিশ প্রশাসন পরিচালিত হবে।

তিনি বলেন, সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ খুবই প্রয়োজন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, বিএনপির নামে কেউ কোন ধরনের অপকর্ম করলে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন কোনো কাজ কেউ করতে পারবে না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য। তাদের ওপর যে কোনো ধরনের আঘাত প্রতিরোধ করতে হবে। যে কোনো অপপ্রচার ও অপচেষ্টার বিরদ্ধে চট্টগ্রামবাসীকে সচেতন থাকতে হবে। আমরা আমাদের বিজয়ী ছাত্র জনতাসহ চট্টগ্রামবাসীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপি নেতা আলহাজ্ব এম এ আজিজ, এডভোকেট আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, হারুন জামান, শফিকুর রহমান স্বপন, নিয়াজ মো. খান, এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, মো. শাহ আলম, ইস্কান্দার মির্জা, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, মো. কামরুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমূখ।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM