গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জনকে আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার ধানমন্ডিতে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের প্রধান কো-অর্ডিনেটর বরাবর এই আবেদন দায়ের করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আরিফ আহম্মেদ সিয়ামের পিতা মো. বুলবুল কবির। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার গাজী এম এইচ তামিম।
আবেদনে হাসিনা ছাড়া আরও যাদের আসামি করা হয়- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রাশিদসহ পুলিশের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মী এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অঙ্গ সংগঠনসমূহকে।
আবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমূলে নির্মূল করার হীন উদ্দেশ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী-লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার নির্দেশনা দেন।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের এবং অন্য আসামিদের নির্দেশে আওয়ামী-লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ সময় দেশব্যাপী আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর আগ্নেয় এবং দেশীয় অস্ত্রসশ্ত্র নিয়ে হামলা করে। তাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এবং কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠন করে। এতে ১৫ই জুলাই থেকে ৫ই অগাস্ট পর্যন্ত সারা দেশব্যাপী কমপক্ষে ৪৩৯ জন শিক্ষার্থী হত্যা করা হয় বলে এই আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনে সিয়ামের বাবা উল্লেখ করেন, ৫ই অগাস্ট আরিফ আহমেদ সিয়াম সাভারে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে আহত হয়। পরে ৭ই অগাস্ট মারা যায় সিয়াম।
আবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনাসহ নয় জন আসামির নির্দেশে ও পরিকল্পনায় সারাদেশে ২৮৬ টি মিথ্যা মামলায় সাড়ে চার লাখ আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে আসামী করা হয়। এর মধ্যে বারো হাজার আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রেখে তাদের মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে সকল আসামিরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনানুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠন করেছেন বলে দাবি করায় আবেদনটিতে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গণহত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনার বিচারের জন্য ইতোমধ্যে কিছু মামলা হয়েছে। কিন্তু রাজপথে থাকা ছাত্র সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনসহ অনেকে দাবি করছে যে এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসাবে খতিয়ে দেখা যায় কি না। আমরা দেখেছি, জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীনে বিচার করা সম্ভব।
জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত টিম কাজ করবে উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যারা যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জেএন/এমআর