চবির নতুন প্রশাসন আসছে শীঘ্রই, আলোচনায় যারা

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের(চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেছেন এক সপ্তাহ হলো। এর আগেই পদত্যাগ করেছিলেন প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রভোস্টগণ। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।

- Advertisement -

স্থবির হয়েগেছে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম। দ্রুত ভিসি প্রক্টর নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি শিক্ষার্থীদের।

- Advertisement -google news follower

কিন্তু কে হবেন পরবর্তী ভিসি? শিক্ষার্থীদের স্বৈরাচার বিরোধী গণ অভ্যুত্থানের পর কারা আসছেন প্রশাসনে? প্রশ্ন অনেকের! শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে আলোচনা ও গুঞ্জন।

তবে এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগের কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

- Advertisement -islamibank

রোববার (১৮ আগস্ট) সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে দ্রুত সম্ভব আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। এটা একটা সুযোগও আমি মনে করবো।

আমরা চাইবো, এতোগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিকারের শিক্ষানুরাগী ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি আসুক। তাদের শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক যোগ্যতা থাকতে হবে। এতোদিন এই জায়গাটায় আমাদের অবমূল্যায়ন হয়েছে।

অন্যদিকে গতকাল শনিবার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়কদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের কার্যক্রম খুব শীঘ্রই শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেমন হওয়া উচিৎ এমন প্রশ্নের জবাবে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সহ সভাপতি ড. আলা উদ্দিন বলেন, আমরা একজন একাডেমিক্যালি ও নৈতিকভাবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য জ্ঞান ও গবেষণা নির্ভর শিক্ষককে ভিসি হিসেবে দেখতে চাই, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষাবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবেন।

যিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিমুক্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করবেন- যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং সম্মানজনক জায়গায় যায়, এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই ক্যাম্পাসকে সকলপ্রকার বৈষম্যমুক্ত (শাটল ট্রেন পরিবহন, হলে সিট্ বন্টন, খাওয়ার মান) পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

একইসাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার শিক্ষাবান্ধব সুসম্পর্ক সুনিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবেন। সকল সেবার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য ছাত্র সংসদসহ সকল সংসদ/সিনেটের ইত্যাদির আশু নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।

দলীয় মনোভাব আছে এমন অনেক শিক্ষক ভিসি পদে আসার সম্ভাবনার গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে এক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি-না তা জানতে চাইলে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল হক বলেন, ছাত্ররা চায় এমন মানুষ যে সামগ্রিকভাবে স্বৈরাচারের দোসর হবে না। সে অর্থে যদি নিরপেক্ষতা চায় তাহলে তো সেটা সম্ভব না।

কারণ আমাদের সমাজটা দীর্ঘ ৫০ বছরে গড়ে উঠেছে আওয়ামিলীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি এভাবে। নিরপেক্ষ পাওয়া অসম্ভব।

আমাদের অন্ততপক্ষে এতটুকু নিশ্চিত হতে হবে যারা স্বৈরাচার না, খুনি না।তখন তো বিএনপি-জামায়াত বা অন্যান্য সংগঠন থেকে আসবে এটা অস্বীকার করার উপায় নাই।

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ. জি. এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, একাডেমিক দক্ষতার পাশাপাশি প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের যে দৃষ্টিভঙ্গি আছে সংস্কারের বিষয়ে সেটাকে যারা নৈতিকভাবে গ্রহণ করতে পারবেন তাদেরই এ জায়গায় আসা উচিৎ বলে মনে করছি।

শিক্ষার্থীদের দাবি স্বৈরাচারী সরকারের দোসর মুক্ত, দক্ষ,যোগ্য,শিক্ষার্থী বান্ধব ও নিরপেক্ষ প্রশাসন। হলে বৈধ সিট বরাদ্দ, উন্নত খাবারের মান ও সেশনজট মুক্ত ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা।

শিক্ষার্থীদের শত প্রত্যাশা পূরণে আগামীর উপাচার্য উপ উপাচার্য হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নাম শুনা যাচ্ছে।

তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান , প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল হোসেন ও অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এস.এম.মনিরুল হাসান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসাইন।

তবে আবুল হোসাইন ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে বেশ কিছু কারণে বিতর্কিত। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রগতিশীল আওয়ামী পন্থী শিক্ষক সমাজ (হলুদ দলের) আহ্বায়ক।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে উপাচার্যপ্রার্থী ছিলেন অধ্যাপক আবুল হোসাইন। সেসময় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং বিভিন্ন দপ্তরে দেন-দরবারর অভিযোগও মেলে তার বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে নানা কারণে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান।

তিনি বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক ঐক্যের প্রধান সমন্নয়কারী ছিলেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে প্রকাশ্য সমর্থন দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের একটা অংশ তাকে ভিসি হিসিবে চাইছেন।

এছাড়াও তিনি অধ্যাপকদের ভোটে নির্বাচিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা লক্ষ করা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক পরিষদের একজন দায়িত্বশীল বলেন, নিরপেক্ষ বলে কোন শিক্ষক নেই সবাই কোন না কোন মতাদর্শের অনুসারী। সেই জায়গা থেকে স্বচ্ছতা, একাডেমিক ও প্রশাসনিক যোগ্যতার বিচারে অবশ্যই ড.শামীম উদ্দিন খান ভিসি পদের জন্য অগ্রাধিকার যোগ্য। তিনি শিক্ষক মহলেও ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্য।

এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সবার আগে তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেন এবং শিক্ষক ঐক্য গড়ে তোলেন। তিনি ভিসি হলে নিয়োগ বাণিজ্যমুক্ত ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM