নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই।
এবার বিদেশের সম্পদের বৈধতা দিতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে।
সপরিবারেই নাকি তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন। বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংগুলোর পর্ষদে ঢুকে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ তার কাঁধে।
মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে সেখানে সম্পদের পাহাড়ও গড়েছেন এই এস আলম।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি।
তৎকালীন আওয়ামী সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাকে এসব সুবিধা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিদেশের সম্পদের বৈধতা দিতেই মূলত তিনি এই পথ বেছে নেন।
একইসাথে অর্থ পাচারের পথ সহজ করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জবাবদিহিতা এড়াতে এস আলম এই কৌশল গ্রহণ করেন বলে মত বিশ্লেষকদের।
একইদিনে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ এবং ওইদিনই দেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ। জানা গেছে, এমন জটিল প্রক্রিয়াও নাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সম্পন্ন হয়েছে বেশ গোপনীয়তার সাথেই।
কিন্তু জটিল এই প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসবের ধার ধারেননি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে এই পরিবারের স্থায়ী বসবাসের অনুমতির নথিতে স্বাক্ষর করা মো. খায়রুল আলম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ কবার চেষ্টা করেন গণমাধ্যম কর্মীরা। তবে চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম এবং আসাদুল আলম মাহির বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের এই সুবিধা অর্জনের সুযোগ বা প্রয়োজন নেই। নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বলেই তারা স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদন ও নথিপত্র বলছে, দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলেও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে এস আলম পরিবারের সদস্যরা জনপ্রতি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ডলার।
তবে এস আলম পরিবারের এই দ্বৈত নাগরিকত্ব তারা যে দেশে নাগরিকত্ব নিয়েছেন সেদের অনুমোদিত নয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিহার করে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ খোঁজেন।
তিনি পরিবারসহ বাংলাদেশের স্থায়ী আবাসিক সুবিধা নেন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে। এই পহ্নায় দুই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার মাধ্যমে অনেকে অর্থ পাচার করেন তিনি।
যেভাবে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি মিললো
কোনো বিদেশি নাগরিক যদি বাংলাদেশে স্থায়ী হতে চায় তাহলে তার ন্যূনতম ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এরপরেই তিনি বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাবেন।
তবে উল্লেখ রয়েছে, এক্ষেত্রে অবশ্যই ভারী শিল্পে বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ ছাড়াও বিনিয়োগের ছাড়পত্র দেয়- এমন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সনদ প্রয়োজন হয়।
কিন্তু এই প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য দরকার পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্র। বাংলাদেশের অনেকেই বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন।
পরবর্তী সময়ে তাদের এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, স্থাবর সম্পত্তির বিক্রির সুবিধার্থে অনেকেই দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। অনেকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতিও গ্রহণ করে থাকেন।
এই পরিবারের স্থায়ী বসবাসের পৃথক অনুমোদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বাসিন্দার মতো সব অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতার অধিকারী হবেন এবং বাংলাদেশের নাগরিকের মতোই দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকবে। তবে সরকার কর্তৃক অর্পিত বা পরিত্যক্ত ঘোষিত কোনো সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না।
বাংলাদেশে শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত অর্থ আবেদনকারী তাহার স্বদেশে অথবা বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে ফেরত বা প্রেরণ করিতে পারবে না, অন্যথায় তার স্থায়ী আবাসিক সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে। ’
এস আলমের বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব আলীমুন রাজীব বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, বিনিয়োগকারী হিসেবে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা দেওয়া হয়।
যদি কোনো বিদেশি নাগরিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ বাংলাদেশে করে, তবে তাকে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বাংলাদেশের কেউ নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে তিনিও বিনিয়োগকারী হিসেবে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা পেতে পারেন। ’
চট্টগ্রামভিত্তিক এই শিল্পগ্রুপের মালিকানায় রয়েছে মোট ৫৬টি প্রতিষ্ঠান। একইসাথে আওয়ামী আমলে ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে গ্রুপটি। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম এবং ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তার ছেলে আহসানুল আলম।
শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে সরকার। সূত্র: নিউজ২৪