সারা দেশে চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে আরও ২ জন।
বন্যার কবলে দেশে ১১ জেলার ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা প্রায় ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪ জন।
আজ বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, বন্যা কবলিত ১১টি জেলা হলো— ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, লক্ষীপুর ও কক্সবাজার।
এর মধ্যে কুমিল্লায় ১২, ফেনীতে ২, চট্টগ্রামে ৫, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ৬, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ১, লক্ষীপুরে ১ ও কক্সবাজারের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর মৌলভীবাজার জেলায় ২ জন নিখোঁজ রয়েছে।
এতে আরও জানানো হয়, দেশে বন্যার কবলে রয়েছে ৭৩টি উপজেলা। আর ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা হলো ৫২৮টি। বন্যাকবলিত এলাকার লোকদের আশ্রয় দেওয়া জন্য মোট ৪ হাজার ৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ৫ লাখ ৪০ হাজার ৫১০ জন লোককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আশ্রয় পেয়েছে ৩৯ হাজার ৫৩১টি গবাদিপশুও।
বন্যার কারণে আহত মানুষের চিকিৎসার জন্য সারা দেশে মোট ৬১৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
এদিকে, ভারী বৃষ্টিতে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কুমিল্লায় গোমতী নদী বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও প্লাবিত হয়েছে নতুন এলাকা।
ফেনী, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এসব এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে বানভাসীরা।
টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ছে বানবাসী মানুষের ভিড়। পর্যাপ্ত নৌযান না থাকায় অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না স্বেচ্ছাসেবকরা।
ভয়াবহ বন্যায় লণ্ডভণ্ড লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলা। কয়দিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু এলাকায় সরে যাওয়া হাজারো মানুষ শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন।
চাঁদপুরে চারদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিতে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। নোয়াখালী-কুমিল্লা-লক্ষীপুর থেকে সরে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক এলাকা। তিন উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে ।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল ও শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসীর আরাফাত জানান, শাহরাস্তিতে ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামে পানিতে ডুবে আছে।
হাজীগঞ্জে চারটি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামে বন্যার পানি প্লাবিত। নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ও পানি বন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও চাউল বিতরণ করা হচ্ছে। ডাকাতিয়া নদী দিয়ে পানি নামছে। শিগগিরই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
চাঁদপুর জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা হেদায়েতুল্লাহ বলেন, ‘চাঁদপুরে ইতোমধ্যে ৬৪টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে আছেন। প্রশাসন থেকে ২১৪ মেট্রিক টন চাউল ও নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকা বিতরণসহ শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।’
কুমিল্লায় গোমতীর নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও বাঁধের ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে নতুন এলাকা। সালদা ও ঘুংগুর নদীর পানিতে তালিয়েছে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। এসব এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ গেলেও ব্যবস্থাপনার অভাবে সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না।
ফেনীর বেশিরভাগ এলাকায় নেমেছে বন্যার পানি। তবে খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ভোগান্তিতে বানভাসী মানুষ। বেশিরভাগ সড়ক বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।
মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘি হাওরের গ্রামগুলো নতুন করে প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে এলাকাবাসী তবে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার পানি নেমে গেছে।
চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছেন বন্যার্তরা। তবে কিছু নিচু এলাকা এখনও তলিয়ে রয়েছে।
এদিকে, ভারতের ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়া হলেও গত ৪৮ ঘণ্টার রাজশাহীর পদ্মার পানি বাড়েনি। আগামী ৭ দিনের মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে বন্যার কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। পদ্মা নদীর পানি এ মুহূর্তে বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।
রাজশাহী বিভাগের পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘গেল ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি প্রবাহিত হয়েছে ১৬ দশমিক তিন শূন্য মিটারে।
সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। ১৮ দশমিক শূন্য পাঁচ মিটার উপরে প্রবাহিত হলেই বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। তবে পদ্মার পানি, গতি–প্রকৃতি নিয়ে সতর্ক রয়েছি। এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
জেএন/পিআর