এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রটোকল অফিসার (পিএস) আকিজ উদ্দিনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা হিসাব ও তাদের মালিকানাধীন ব্যfবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বলেছে। বিএফআইইউয়ের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হিসাব জব্দ করাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব লেনদেন বন্ধ থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না তারা। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার সময় বাড়ানো হবে।
লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে আকিজ উদ্দিনসহ তার পরিবারের সদস্যদের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বিএফআইইউয়ের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোনো হিসাব স্থগিত করা হলে হিসাব সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কাছে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে।
কে এই আকিজ উদ্দিন
ডিগ্রি পাস করার পর ২০০৯ সালে আকিজ উদ্দিন এস আলম গ্রুপের মালিকাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরই মধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রটোকল অফিসার (পিএস) হন। তিনি এস আলমের এস আলমের এতটাই মন জয় করেন যে, ১৪ বছরের ব্যবধানে অস্বাভাবিক পদোন্নতি পেয়ে বনে যান ইসলামী ব্যাংকের মতো দেশসেরা প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)।
অভিযোগ উঠেছে, গত ৬ আগস্ট ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮৮৯ কোটি টাকার ‘বেনামি ঋণের’ মাধ্যমে অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ডিএমডি আকিজ উদ্দিন। তবে, ব্যাংক কর্মকর্তাদের তৎপরতায় ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলন আটকে যায়। এসব অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল আকিজ উদ্দিনের মালিকাধীন ‘গোল্ডেন স্টার’ ও ‘টপ টেন ট্রেডিং হাউজ’ নামে দু’টি প্রতিষ্ঠান।
ইসলামী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই আকিজ উদ্দিন নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করতেন। তিনি আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে এস আলমের কোটি কোটি টাকা পাচারে সহযোগিতা করতেন। বেনামি ঋণ সৃষ্টি করে ওই অর্থ দিয়েই ইসলামী ব্যাংকের বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এস আলমের বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার কিনতেও সহযোগিতা করতেন। আর এভাবেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট এস আলমের নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেয় বিক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা। এরপর গত ৭ এবং ৮ আগস্ট ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের পর হওয়া পদায়ন পাওয়া এক্সিকিউটিভসহ (নির্বাহী কর্মকর্তারা) যারা অবৈধ ভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবি করেন। এমন অবস্থায় ডিএমডি মো. আকিজ উদ্দিনকে বরখাস্ত করে ইসলামী ব্যাংক।
জেএন/এমআর