বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মাহুতি দিবস আজ

অনলাইন ডেস্ক

তখন বয়স ছিল তার একুশ। কিশোর থেকে কেবল তারুণ্যে পা দিয়েছেন। পরনে মালকোঁচা ধুতি। মাথায় গৈরিক পাগড়ি। গায়ে লাল ব্যাজ লাগানো শার্ট। এক হাতে রিভলবার, অন্য হাতে হাতবোমা। ইনিই দলনেতা। দলের সদস্যসংখ্যা ৭। সবার পরনে রাবার সোলের কাপড়ের জুতো। সবাই প্রস্তুত। দলনেতার মুখে ‘চার্জ’ শুনতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল শত্রুর ওপর। ক্লাবে তখন নাচ-গানের মচ্ছব। পিকরিক অ্যাসিডে তৈরি বোমাটি বজ্রের মতো ভয়ংকর শব্দে ফেটে পড়ল; হলঘরে তখন শুধু ধোঁয়া। দলনেতাই এগিয়ে গেল সবার আগে। অথচ এটাই তার প্রথম অভিযান। বোমার বিস্ফোরণ, গুলির শব্দ, শত্রুর মরণ চিৎকার মিলে এলাকাটা যেন পরিণত হলো এক দক্ষযজ্ঞে!

- Advertisement -

না এটা কোনো অ্যাডভেঞ্চার ফিল্মের দৃশ্য নয়। এটি বাঙলার ইতিহাসের এক অনন্য ঘটনা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবে ভয়াবহ যে হামলা হয়েছিল তারই দৃশ্য এটি। এ হামলার ২১ বছরের দলনেতা পুরুষ বেশে একজন নারী! বাংলারই নারী! নাম তার প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রথম নারী আত্মদানকারী।

- Advertisement -google news follower

মহাপরাক্রমশালী ব্রিটিশদের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়া বাংলার আঁধারবিনাশী বিপ্লবীর ৯৩তম আত্মাহুতি দিবস আজ।

১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ সমুরা গ্রামে ধলঘাটে তার জন্ম হয়েছিল। বাবা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন মিউনিসিপাল অফিসের হেড কেরানি আর মা প্রতিভাদেবী সাধারণ গৃহিণী। প্রীতিলতাকে প্রতিভাদেবী আদর করে ডাকতেন রানি বলে। ছাত্রী হিসেবে সেরাদের তালিকায় ছিলেন প্রীতিলতা। শিক্ষার হাতেখড়ি চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। প্রতি ক্লাসে ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষকদের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন।

- Advertisement -islamibank

প্রীতিলতার স্বপ্ন ছিল বড় বিজ্ঞানী হওয়ার। তবে ইংরেজ সৈন্যদের সঙ্গে পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রানির লড়াইয়ের ইতিহাসের গল্প শুনে তার চেতনা উদ্দীপ্ত হয়। বাংলাকে ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্ত করতে নিজেকে অকুতোভয় বিপ্লবী হিসেবে দেখা শুরু করেন। তবে বিপ্লবী হলেও পড়াশোনায় ছিলেন দারুণ মেধাবী। সংস্কৃত কলায় লাভ করেছিলেন বৃত্তি। লেটার মার্কস নিয়ে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাশ করেছিলেন। নাটক লিখে মঞ্চে পরিবেশনও করতেন।

ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম ও সম্মিলিতভাবে পঞ্চম স্থান লাভ করেন। এজন্য মাসিক ২০ টাকার বৃত্তি পান। পরে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ডিসটিংশান নিয়ে বিএ পাশ করেন। তবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ায় তার সে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছিল।

মজার ব্যাপার হলো, সে ফলাফলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ৮০ বছর পর। অর্থাৎ ২০১২ সালের ২২ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রীতিলতাকে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হয়। ছোটবেলায় ‘ক্ষুদিরামের ফাঁসির’ কথা পড়তে গিয়ে ভাবতেন এ-ও কী সম্ভব! মনে প্রশ্ন জেগেছিল, আমরা মেয়েরা কী তাদের মতো পারি না?

১৯৩২ সালে পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবে ভয়াবহ অভিযান চালানোর আগে মাকে লিখেছিলেন, ‘মাগো, অমন করে কেঁদো না! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি। তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভাবে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অপমানিত! প্রীতিলতার বিপ্লবী হওয়ার বিষয় অবগত হওয়ার পর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক ইন্সপেক্টর হতবাক হয়ে বলেছিলেন, ‘এত শান্তশিষ্ট মেয়ে ও, এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে, ভাবতেও পারি না তার ভেতর এত কিছু! আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে পালিয়ে গেল।’

বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পঙ্কজ চক্রবর্তী বলেন, প্রীতিলতার মতো এমন বিপ্লবী দেশপ্রেমিক ফিরে আসুক যুগে যুগে শতবার। বীরকন্যা প্রীতিলতার দুঃসাহসী মনোভাব, সংগ্রামী জীবন ও দেশপ্রেমিক চেতনা বর্তমান প্রজন্মের জন্য প্রেরণার প্রতীক হয়ে থাকুক।

বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের ধলঘাটে সকালে প্রীতিলতার আবক্ষ মূর্তিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভা এবং সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বালন করবেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM