চট্টগ্রামে অস্থির হয়ে উঠেছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। চড়া থেকে আরও চড়া হচ্ছে পণ্যের দাম। প্রয়োজনীয় পণ্য ধনেপাতা থেকে শুরু করে, মাছ, মাংস, মুড়িসহ সবকিছুরই দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী।
বেড়েই চলেছে ডিম, চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের দামও। সরকার তিন নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর দাম আরও বেড়ে গেছে। নির্ধারিত দামে কোথাও মিলছে না ডিম ও ভোজ্যতেল।
মুরগির ডিম, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম আগের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর দুই সপ্তাহ আগে আলু ও পিঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানো হলেও সুফল নেই। সব মিলে দাম বেড়েছে সব সবজির।
গতকাল বুধবার বিকেল থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি বাজার, রেয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজার, কর্ণফুলী বাজার, স্টিল মিল বাজার, ইপিজেড বাজার, পাহাড়তলী বাজার, আতুরার ডিপো বাজার, ফইল্যাতলী বাজার, ষোলশহর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজার, বিবিরহাট বাজার, কর্ণেলহাট বাজারসহ নগরীর বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী।
বিশেষ করে চাকরিজীবীসহ স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে। খুচরা ও পাইকারী বাজারের মধ্যে ব্যাপক ফারাক। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন মূল্য তালিকা।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দর ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়। সেই হিসাবে প্রতি ডজনের দর দাঁড়ায় প্রায় ১৪৩ টাকা।
যখন ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তখন প্রতি ডজন বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে। যা এরপর আরও বেড়ে এখন ১৬৫ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ দাম বেঁধে দেওয়ার পর হালিতে আরও ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম।
একই অবস্থা ব্রয়লার ও সোনালি জাতের মুরগির ক্ষেত্রেও। বাজারে যখন প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ১৭০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল, তখন সরকার দাম বেঁধে দেয় প্রতি কেজি যথাক্রমে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা।
এরপরই কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে এসব মুরগির দাম। এখন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, সোনালি জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়।
উৎপাদনকারী থেকে খুচরা ব্যবসায়ী কেউই মানছেন না বেঁধে দেওয়া দাম। ফলে আমিষ জাতীয় খাদ্যপণ্য দুটি আগের চেয়ে বাড়তি দমে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর পরও বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আলুর কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর শুল্ক কমানোর পাশাপাশি বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম দাম প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার। দুটি ব্যবস্থাই এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। তবে এখনও কমেনি পেয়াঁজ রসুন ও আদার দাম।
বাজারগুলোতে প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। কাঁচামরিচ বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। গাজর বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। দেশি ধনেপাতা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচাবাজারগুলোতে পেঁপে ৫০, লাউ ৫০, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনের বড়তি নজরদারি না থাকায় সব পণ্যেই দাম বেড়ে গেছে। দুষছেন বাজার সিন্ডিকেটকে। ক্রেতারা প্রশাসনের নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের ওপর জোর দেওয়ার দাবি জানান।
কাহজর দেউরি বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবি দোলন রাহার সাথে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, বর্তমানে বাজারে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে জনমনে অস্বস্তি বিরাজ করছে।
মুরগির মাংস, ডিম, সবজি, চাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা—এই সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় গরিব এবং মধ্যবিত্তদের একটি বিরাট অংশ দুর্ভোগে পড়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে আসা সাধারণ ক্রেতা মুন্নি বেগম জানালেন যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই এখন দেশের বাজারের সকল ভোগ্যপণ্য ঊর্ধ্বমুখী। তার প্রশ্ন? এখন তো সিন্ডিকেট সরকার নেই, পথে পথে চাঁদাবাজিরও খবর নেই। এরপরও আগের তুলনায় দাম আরও ওঠানামা করছে কেন? দেশ আর কতবার স্বাধীন হলে দ্রব্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে?
মুদি দোকানে গিয়েও দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি রসুন ২২০-২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৪০-২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকায়।
সাদা মটর ডাল ৮০ টাকা, মসুর ডাল (চিকন) ১৬০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে সয়াবিন তেল লিটার ৮৫ টাকা, চিনি প্রতিকেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারেও স্বস্তি নেই ক্রেতাদের। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯৫০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৮০ থেকে ১১৫০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকায়।
মাছের দামে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। বেশির ভাগ মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৩৮০ টাকায়।
এছাড়া চাষের পাঙাশ ১৮০-২০০, তেলাপিয়া ২২০-২৫০, চাষের কই ২৪০-২৮০, চাষের শিং প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০, কোরাল ৭৫০, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০, বোয়াল ৭০০, আইড় ৭৫০-৮০০, পাবদা প্রতি কেজি ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়মিত কোনো স্থায়ী সংস্থা না থাকলে এদের নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন মাজেদুল নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী। সে জানায়, সময় এসেছে বাজার নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী এবং দক্ষ ও নির্লোভ সংস্থা গঠন করার।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি চালের বাজার ঘুরেও দেখা গেছে চালের দাম কমার লক্ষণ নেই, বরং এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
আলভি ও সরোয়ার নামে আরও দুই ক্রেতার ধারণা, এ বাজার অস্থিরতার পেছনে কেউ কারসাজি করছে না তো? প্রশ্ন রেখেছেন বিষয়টি দেখার যাদের দায়িত্ব তারাই–বা কী করছে?
জেএন/পিআর