ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ৯ ম্যাচ খেলেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাংলাদেশ হারাতে না পারলেও তার চেয়ে ২ ম্যাচ কম খেলেই জয়ের দেখা পেয়ে গেছে আয়ারল্যান্ড। মাত্র ৭ ম্যাচ খেলেই প্রোটিয়াদের হারিয়ে দিয়েছে আইরিশরা।
৯ ছক্কায় বিধ্বংসী সেঞ্চুরি উপহার দিলেন ওপেনার রস অ্যাডায়ার। তার দুই বছরের ছোট ভাই মার্ক অ্যাডায়ার শিকার করলেন চার উইকেট।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে স্মরণীয় এক জয় পেল আয়ারল্যান্ড। দুই ভাইয়ের দারুণ পারফরম্যান্সে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০ রানে হারাল আয়ারল্যান্ড। সিরিজ হলো ড্র।
আবু ধাবিতে রবিবার ২০ ওভারে আয়ারল্যান্ড তোলে ১৯৫ রান। ৫ চার ও ৯ ছক্কায় ৫৮ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলেন রস অ্যাডায়ার। আরেক ওপেনার ও অধিনায়ক পল স্টার্লিংয়ের ব্যাট থেকে আসে ফিফটি।
রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। এক পর্যায়ে তাদের রান ছিল ১ উইকেটে ১২১। কিন্তু দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরে ম্যাচ জিতে নেয় আইরিশরা।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে চতুর্থবার চার উইকেটের স্বাদ পান মার্ক অ্যাডায়ার। দারুণ বোলিংয়ে তিন উইকেট নেন গ্রাহাম হিউম।
শেষ দিকে ম্যাচ যখন জমজমাট, দুই ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ২৩ রান, তখন ১৯তম ওভারে কেবল ৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে আয়ারল্যান্ডকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যান মার্ক অ্যাডায়ার।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আয়ারল্যান্ডকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন রস অ্যাডায়ার ও স্টার্লিং। প্রথম ওভারে চার দিয়ে শুরু করেন অ্যাডায়ার।
দ্রুতই নিজের সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রান বাড়াতে থাকেন স্টার্লিং। পরে অ্যাডায়ারও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ছাড়িয়ে যান অধিনায়ককে।
পাওয়ার প্লেতে দুজন তোলেন ৫৯ রান। ক্রমে রানের গতি বাড়তে থাকে আরও। ৩২ বলে ফিফটি করেন রস অ্যাডায়ার, ২৯ বলে স্টার্লিং।
৭৯ বলে ১৩৭ রানের জুটি ভাঙে শেষ পর্যন্ত স্টার্লিংয়ের বিদায়ে। ৩১ বলে ৫২ করে আউট হন আইরিশ অধিনায়ক। অ্যাডায়ার সেঞ্চুরি করেন ৫৭ বলে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে বেশ সহায়তাও পান তিনি। ক্যাচ দিয়েও যে বেঁচে যান পাঁচ দফায়!
আয়ারল্যান্ডের হয়ে এই সংস্করণে সেঞ্চুরি করা তৃতীয় ব্যাটসম্যান তিনি। তবে তার ৯ ছক্কাই আয়ারল্যান্ডের রেকর্ড। দুই দফায় ৮ ছক্কা মেরে আগের রেকর্ড ছিল পল স্টার্লিংয়ের।
এই ম্যাচের আগে ৯টি টি-টোয়েন্টি খেলে একটি ফিফটি ছিল মার্ক অ্যাডায়ারের। আগের অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নির জায়গায় তাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে দল। সেই পথ বড় পদক্ষেপ নিলেন ৩০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
সেঞ্চুরির পরই অবশ্য আউট হয়ে যান তিনি। পরের সময়টায় প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি অন্য ব্যাটসম্যানরা। কেবল জর্জ ডকরেল ১৩ বলে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন।
শেষ ৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে কেবল ৩৯ রান যোগ করতে পারে আইরিশরা। রান তাতে দুইশ হয়নি।
রায়ান রিকলটন ও রিজা হেনড্রিকস উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ রান তুলে ফেলেন পাওয়ার প্লের মধ্যে। চার ছক্কায় ৩৬ রান করে রিকলটন আউট হওয়ার পর দলকে আরও এগিয়ে নেন হেনড্রিকস ও ম্যাথু ব্রিটস্কে। এই জুটিতে আসে ৪২ বলে ৭১ রান।
৩২ বলে ৫১ রান করা হেনড্রিকসকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার বেন হোয়াইট। অধিনায়ক এইডেন মার্করাম ছক্কায় শুরু করলেও বিদায় নেন ৮ রানেই।
এরপরও ম্যাচ নাগালে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। শেষ ৭ ওভারে ৬৮ রান দরকার ছিল তাদের, উইকেট বাকি তখনও ৮টি।
কিন্তু এরপরই পেছনে হাঁটতে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। মিডল অর্ডারে ছোবল দেন মার্ক অ্যাডায়ার ও হিউম। উইকেট ধরা দিতে থাকে একের পর এক।
শেষ দুই ওভারে পতন হয় পাঁচ উইকেটের। প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের পর আর কোনো প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
মন্থর ওভার-রেটের কারণে শেষ ওভারে একজন ফিল্ডার বৃত্তের ভেতরে বাড়তি রাখতে হয় আয়ারল্যান্ডকে। তবু দারুণ বোলিংয়ে কাজ শেষ করেন হিউম।
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আট ওয়ানডেতে একটি জয় আছে আয়ারল্যান্ডের। এবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জয় ধরা দিল সপ্তম ম্যাচে। টি-টোয়েন্টি সবচেয়ে বেশি দলকে হারানোর রেকর্ডটি আরও সমৃদ্ধ করল আয়ারল্যান্ড (২৬টি)।
জেএন/পিআর