সেদিন দেশের মানুষ ঘুম ঘুম চোখে দেখবে নতুন সকাল। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় প্রহর গুনবে জয়ের। নিজ মত, দল, অবস্থান আর বিশ্বাসের লক্ষ্যপূরণের জয় দেখতে দিনভর নজর থাকবে অনলাইন মিডিয়া আর টিভির পর্দায়। সাদা চোখে মাঠে শুধু দুটো পক্ষ। তবে পর্দার অন্তরালে যার যার অবস্থানে প্রাপ্তির খাতায় জয়যোগ করতে চাইবে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংবাদমাধ্যম, ভোটার থেকে শুরু করে দেশের সব শ্রেণি-পেশার সব বয়সের মানুষ। ৩০ ডিসেম্বরের বাংলাদেশে তাই সব মুখে আওয়াজ থাকবে একটাই, জিতছিতো?
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে জিততে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অমীমাংসিত অনেক ইস্যুর সমাধানের জন্যও আরেকবার ক্ষমতায় যেতে চায় দলটি। দেশের সর্বত্র দলটির প্রার্থীরা তাই প্রচারণায় দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করেছেন। মাঠের পাশাপাশি দলটির অনলাইন প্রচারণাতেও ছিল অভিনবত্বের ছোঁয়া।
সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে কঠিন সময় পার করা বিএনপি জয়ের বিকল্প কিছু ভাবতেই চাইছে না। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন কারাগারে অন্তরীণ। অধিকাংশ নেতা-কর্মীকে একাধিক মামলায় নিয়মিত হাজির হতে হচ্ছে আদালতে। দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিক কাজেও এখন ভাটার টান। তাই এবারের নির্বাচনে জয় তুলে নিয়ে রাজনৈতিকভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে দলটি।
জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, বিকল্প ধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাসদ, সিপিবি, গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নিজের সামর্থে্যর মধ্যে ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে নিয়েছে। তবে নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে প্রার্থী দিয়ে সাড়া ফেলে দেওয়া ইসলামী আন্দোলন ফলাফলে বড় ধরনের চমক দেখাতে চায়। প্রতিটি আসনে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট তুলে নিয়ে দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দিতে চাইছে চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন দলটি।
একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা সব পক্ষের সঙ্গে বসছেন, শুনছেন সবার কথা। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নিজের লক্ষ্যের কথা সংবাদমাধ্যমের সামনে বলছেন প্রায় প্রতিদিনই। নির্বাচন কমিশন ও ভোটগ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবের পাশাপাশি মাঠে আছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও। কোন ধরনের নাশকতা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছেন তারা। বিশেষ করে ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে দেশের সবগুলো ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের এলাকা।
ভোটারদের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। তাদের চাওয়া নিজেদের পছন্দের প্রার্থী ও দল যাতে ক্ষমতায় আসে। ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে সারাদেশের ভোটাররা তাই বিপুল উৎসাহে যার যার নির্বাচনি এলাকায় ফিরছেন। শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে আসা প্রবাসীদের সংখ্যাটাও নেহায়েত কম নয়। দীর্ঘ একটা বিরতির পর ভোট, তাই ভোটাররা প্রতিদিন চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন প্রার্থীদের ভালো-মন্দের হিসাবনিকাশে।
সবমিলিয়ে অপেক্ষা এখন ৩০ ডিসেম্বরের। যে দিনটিতে ব্যালট বিপ্লবে জিততে চান ভোটার-প্রার্থী সবাই।