চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ হয়ে বাংলাদেশে আগমন করেন ২০২৩ সালে। লঙ্কান এই কোচের আগমনে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম; সব জায়গাতেই ছিল আলোচিত। দলের তৎকালীন অবস্থায় রাসেল ডমিঙ্গোর স্থলাভিষিক্ত হওয়া হাথুরুসিংহে সবার কাছে ছিলেন আশীর্বাদ স্বরূপ। তবে মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখতে খুব একটা দেরি হয়নি। বিশেষ করে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ভরাডুবি, একই সঙ্গে গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
দীর্ঘ এক বছর এমন বিতর্কিত কাজের জন্য শাস্তি পেলেন এই লঙ্কান কোচ। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে চলকালীন ক্রিকেটারদের গায়ে হাত তোলার ঘটনাটি ঘটে। যা নিয়ে সেই সময়ে গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচনা হয়ে থাকে। কিন্তু সাবেক বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসানের পাপন ও সেই সময়ের তার অধীনে আগের বোর্ডের কেউই এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। এমনকি এই ইস্যুতে গণমাধ্যমকেও পরিষ্কার বার্তা থেকে ঘটনার সত্যতা সামনে নিয়ে আসেননি।
এরপর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ব্যাপক রদবদল ঘটে। নাজমুল হাসান পাপনের পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট পদে স্থলাভিষিক্ত হন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে সেই ঘটনা খোলসা করলেন তিনি। চূড়ান্ত যাচাই ও তদন্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে হাথুরুকে শাস্তি দিল বিসিবি। অথচ তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার প্রায় একবছর পরও ঘটনা সামনে আনেননি সাবেক বিসিবি প্রধান পাপন ও তার বোর্ডের কেউই।
আজ মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে হাথুরুকে বরখাস্ত নিয়ে বিসিবি প্রধান ফারুক বলেন,‘ক্রিকেটারের সাথে বাজে ব্যবহার ও চুক্তির নিয়ম না মানায় আমরা তাকে শোকজ করেছি। বরখাস্ত করার আগে আমরা তাঁকে নিয়ম মেনে শোকজ নোটিশ করেছি। ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁকে। এরপর আমরা বরখাস্ত করব।’
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে গায়ে হাত তোলার বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে ফারুক বলেছেন, ‘একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমার খারাপ লেগেছে। জাতীয় দলের ক্রিকেটার দেশের গৌরব, ১৮ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। ওই নামটা আর না নিই, ওটা ছিল কোচের অসদাচরণ। ভিকটিম, প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রত্যক্ষদর্শীরও রিপোর্ট ছিল। তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে আমি অনেক কাজ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো আগের কথা বলতে পারব না। আমি আমার সময়টায় বলতে পারব। আমি দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে সমাধান করার চেষ্টা করেছি। আমি আগে থেকে যখন এটা জেনেছি তখন থেকেই ফিল করেছি একটা কিছু করলে ভালো হয়। তাছাড়া এই আইসিসিও এসব গুরুত্ব দিয়ে দেখে। যার সাথে হয়েছে ঘটনাটা এটা তার জন্য অনেক কঠিন একটা বিষয়।’
হাথুরুর শাস্থি ইস্যুতে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার তার সাথে তো ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট কোনোভাবেই হতে পারে না। এটার শাস্তিই এখন দেওয়া হয়েছে। আমি সেই ক্রিকেটারের সাথে ফোনে ও ফিজিক্যালি কথা বলেছি। রিপোর্ট আমি পড়েছি। রিপোর্ট নিয়ে আমি কাজ করেছি। রিপোর্টে সব আছে, বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সবকিছুই আছে। যারা চোখে দেখেছে তাদের কাছেও শুনেছি। সেই রিপোর্টও আছে। সবমিলিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
হাথুরুকে বরখাস্ত করতে বিসিবির সুবিধা হয়েছে তাঁর অতিরিক্ত ছুটি ভোগের কারণে। বিসিবিকে না জানিয়ে বছরে তাঁর পাওনা ৪০ দিনের বেশি সময় কাটিয়েছেন হাথুরু। ফারুক বলছেন, ‘একজনের অসদাচরণের বিরুদ্ধে নোটিশ দেওয়ার কিছু নেই। সে যে সময় ছুটি কাটিয়েছে, সেটা ৩ মাসের বেশি। ওটাও অসদাচরণের অংশ। বিচ্ছিন্নভাবে তিনি ই-মেইলে জানিয়েছেন, তবে সেটা তিন মাসের বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। আপনার জবাবদিহি থাকতে হবে। এখানে নিয়ম ভেঙেছেন, আমরা জানিয়েছি যে খেলোয়াড়ের সঙ্গে তার অসদাচরণ এবং একজন কর্মী হিসেবে নিজের অসদাচরণ।’
জেএন/এমআর