ফ্যাসিবাদের দোসরদের বাদ দিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে ব্যবসায়ী সংগঠন পরিচালিত হলে নিজেরাই নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে পারবে বলে মত দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। একইসঙ্গে বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের একই ধারণার কেউ যাতে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে না পারে, তাদের সরাতে যেন আবারো গণঅভ্যুত্থানের প্রয়োজন না পড়ে সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলেছেন তিনি।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে তিনটায় আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কনফারেন্স রুমে চট্টগ্রামের বিভিন্ন দপ্তর, অ্যাসোসিয়েশন, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সরকার প্রভাবিত নয় উল্লেখ করে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কোন লোক নেই, দলও নেই। আবার আমরা প্রভাবিত নই। তাই বিগত সরকারের সময়ে দখল অপদখলের কারণে বাণিজ্য সংগঠনগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। আপনারা দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো চিহ্নিতপূর্বক তা সমাধান করে কার্যকরের জন্য প্রশাসককে সহায়তা করেন।’
নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও অর্থ সংক্রান্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে উপদেষ্টা পরিষদমন্ডলীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তা সমাধানের চেষ্টা করবো। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কৃষকদের থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করে ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। আমরা চাই, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে এ উদ্যোগে ব্যবসায়ীরাও অংশগ্রহণ করুক।’
সাকিব ইস্যুতে যা বললেন
সাকিবের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তাঁর বক্তব্য খোলাসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ক্রীড়াঙ্গনে যাতে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি না ঘটে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য বিসিবিকে আমি-আপাতত সাকিব যেন দেশে না আসে সেই পরামর্শ দিয়েছি। সে অনুযায়ী বিসিবি তার সঙ্গে কথা বলেছে। নিরাপত্তা বলতে শুধু এটা না যে নিরাপদে দেশের হয়ে খেলবে, দেশে যদি নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা থাকে সেটাও ভাবতে হবে। উভয় দিক থেকে নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটতে পারে। সেজন্য এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা অসাধারণ অভ্যুত্থান হয়েছে এটা সবাই জানে, পুরো বিশ্ব জানে। আইসিসিও অজ্ঞ না, তারাও এটা জানে। এখানে অসাধারণ পরিস্থিতি হওয়ার যে কারণ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা ছিল। এবং এই সম্পৃক্ততার কারণেই কিন্তু মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং ক্ষোভের বহিপ্রকাশও আমরা দেখতে পেয়েছি। সবাই এই বিষয়টা জানে। কারও অজানা নয়। আন্তর্জাতিকভাবেও সবাই জানে। আইসিসি থেকে যদি আপত্তি জানায় সেটি বিসিবিকে জানাবে। আর বিসিবিকে জানানোর আগে তো আমি কিছু বলতে পারি না এই বিষয়ে।’
কিছুদিন পর জানতে চাইবো কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, গুলি করার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার নির্দেশ দিয়েছে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম এ উপদেষ্টা বলেছেন, আমি এখন প্রতিবেদনটা নেব। কিছুদিন পরে জানতে চাইব কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আপডেটটা কী? এখনো চট্টগ্রামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার জন্য আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির লোকজন চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি চট্টগ্রামের রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সবাইকে বলব রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবিলা করার জন্য। আর প্রশাসনকে অবশ্যই বলব তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে।’
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় পরিচালক এবং চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান এবং চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ‘সভায় উত্থাপিত সমস্যাগুলো চিহ্নিতপূর্বক সমাধানে কাজ করা হবে। এছাড়া বন্দর ও কাস্টমস সংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে তা সুরাহা করা হবে।’
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে বিএসটিআই’র উন্নত ল্যাব থাকার পরও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের পণ্যের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এখনও ঢাকায় যেতে হয়। ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিএসটিআই আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে সকল পরীক্ষা চট্টগ্রাম থেকে সম্পন্ন করবে।’
চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, ‘সরকার আমাকে চট্টগ্রাম চেম্বারে একটি সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য দায়িত্ব প্রদান করেছেন। সকলের সহযোগিতা নিয়ে সেই দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে চাই। দায়িত্ব নিয়ে আমি সদস্য নবায়ন ও আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইন এবং প্রতিদিনের হালনাগাদ তথ্য চেম্বার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছি।’
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন আইসিডির অতিরিক্ত চার্জ, ব্যবসায়িক হয়রানি, ট্যাক্স ও ভ্যাট নামে হয়রানি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক্সেল লোড, বন্দর শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ, শ্রমিকদের টিসিবির মাধ্যমে রেশন কার্ড, বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার মো. জাকির হোসেন, চেম্বারের সাবেক সভাপতি সরোয়ার জামাল নিজাম, আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ, সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, সাবেক পরিচালক আমজাদ হোসেন চৌধুরী, চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিট্যাবলস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন’র সভাপতি মাহবুব রানা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সালামত আলী, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবিদা মোস্তফা, বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের আহবায়ক এস. এম. সাইফুল আলম, প্রাইম মুভার এসোসিয়েশনের সভাপতি খান মো. সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেএন/এমআর