চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদিবাগস্থ বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে আবারো ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় সোহেল রক্ষিত নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
রোগীর ভাই অভিযোগ করে বলেন, তার ভাই সোহেলকে সামান্য জ্বর নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন স্বজনরা। কিন্তু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার অবস্থা গুরুতর জানিয়ে তাকে ভর্তি করে নেন আইসিইউতে।
যেখানে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখে রোগীকে সর্বাত্মক সেবা প্রদানে সুস্থ করে তোলার কথা, সেখানেই চলে নানান অযত্ন আর অবহেলা।
রোগীর ভাইয়ের দাবি গতকাল রবিবার রাতে আইসিইউতে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অযত্ন অবহেলার কারণে লাইফ সাপোর্টেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তার ভাই।
কাঁদতে কাঁদতে মৃত সোহেলের ভাই প্রতিবেদককে জানান, ম্যাক্স হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা আগেও অনেক শুনেছি, প্রায় শুনি।
এরপরও হুঁশ ফিরছে না কর্তৃপক্ষের। আর কত রোগীর মৃত্যুর হলে ভুল শোধরাবে ম্যাক্স হাসপাতাল,প্রশ্ন স্বজনদের?
এদিকে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ পেয়ে ম্যাক্স হাসপাতালে ছুটে গিয়ে আইসিইউতে রোগীর চরম অবহেলা জনিত একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে জয়নিউজবিডি টিম।
পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এর সত্যতা জানার চেষ্টা করলেও তখন হাসপাতালে কর্তব্যরত কোন চিকিৎসক ও দায়িত্বরত স্টাফদের পাওয়া যায়নি। সাংবাদিক আসার খবরে হাসপাতাল ছেড়ে সবাই পালিয়েছে জানালেন রোগীর স্বজনরা।
বিষয়টি তাৎক্ষণিক চকবাজার থানাকে অবহিত করা হলে থানা থেকে এসআই এনামুল হকের নের্তৃত্বে একটি টিম এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন এবং রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলেন।
পরে তিনি সংরক্ষিত ভিডিও ফুটেজটি তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে নেন এবং রোগীকে অযত্ন অবহেলা এবং রোগীকে লাইফ সাপোর্টে রেখে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি যথাযথ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
আজ সোমবার ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন। পরে একাধিক বার ফোন করেও তার সাথে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য : ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসা, গাফিলতি এবং নার্সদের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা নতুন কিছু নয়।
রোগী মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে ২০১৮ সালে। ওই বছরের ২৮ জুন গলাব্যথা নিয়ে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হন সাংবাদিক কন্যা শিশু রাইফা। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
দুই বছর চার মাস বয়সী রাইফার মৃত্যুর পর ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতি, অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে গড়ে ওঠে আন্দোলন।
ছয় বছর আগে ওই ঘটনায় চিকিৎসক ও সাংবাদিকরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে ওই বছরের ১৮ জুলাই রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান বাদি হয়ে নগরীর চকবাজার থানায় মামলার আবেদন করেন। দুদিন পর সেই মামলা গ্রহণ করা হয়।
ওই মামলায় ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী খান, ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেবকে আসামি করা হয়।
সবশেষ চলতি বছরের ২৫ মার্চ রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেন তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক।
তখন তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, শিশু রাইফার চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে ৩০৪ (ক) এবং ১০৯ ধারায় চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
ওই চিকিৎসকরা হলেন-বিধান রায় চৌধুরী, দেবাশীষ সেনগুপ্ত, শুভ্র দেব এবং ম্যাক্স হাসপাতালের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান।
তাছাড়া ২০১৯ সালেও জিহান সারোয়ার নামে ১৩ মাস বয়েসি এক শিশু ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠে ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
লালখান বাজারের চানমারী রোডের বাসিন্দা শামীম সারোয়ার ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা মোহছেনা আক্তার ঝর্ণা সিভিল সার্জন বরাবর দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর তার এক বছর ২৪ দিন বয়েসি পুত্র জিহান সারোয়ার প্রিয় অসুস্থ বোধ করলে তাকে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করানো হয়।
ভর্তির পর অনকলে চিকিৎসক সনত্ কুমার বড়ুয়াকে দেখালে তিনি ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। আমার সন্তানকে মেশিনের মাধ্যমে ধীরে ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও গত ২১ নভেম্বর দুপুরে অনভিজ্ঞ নার্স ঐ ওষুধের শেষের অংশ হাত দিয়ে পুশ করেন। আর তখনই আমার সন্তান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
অভিযোগের কথা স্বীকার করে তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. শেখ মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি বলেন, ঘটনাটি তদন্তে কমিটি গঠন করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য কমিটিকে সময় দেওয়া হবে।
তবে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে ম্যাক্স হাসপাতালের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী বলেছিলেন আমরা শিশুটিকে সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দিয়েছি।
জেএন/পিআর