চট্টগ্রামে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনীতে ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না। আবেদনের পর মাসের পর মাস পার হলেও মেলে না সংশোধিত এনআইডি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অদক্ষ লোক দ্বারা এনআইডি কার্যক্রম পরিচালনার মাশুল দিতে হচ্ছে। কোনো জায়গায় নামে ভুল, আবার ঠিকানায় ভুল, কোথাও বয়সে। তথ্য সংগ্রহকারীদের সামান্য ভুলের জন্য এখন বড় ভোগান্তি।
নগরীর আগ্রাবাদের বাসিন্দা ইমরান ও বড়পুকুর এলাকার সালামতসহ কয়েকজন আবেদনকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভোটার হওয়ার চেয়ে এনআইডি সংশোধন করা অনেক বেশি কঠিন। প্রথমে ফিসহ সব ডকুমেন্ট দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। অনলাইনে আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে হার্ড কপি নিয়ে যোগাযোগ করতে হয়। যোগাযোগ না করলে পড়ে থাকে মাসের পর মাস।
তবে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস কর্মকর্তাদের দাবি, প্রতিদিনই এনআইডি সংশোধন হচ্ছে। অনেকেই সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় যেসব ডকুমেন্ট দিতে হয় সেগুলো ঠিকঠাক দেন না বলেই তাদেরগুলো সংশোধন করতে সময় লাগে। যারা প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র দেন তাদের এনআইডি সংশোধনে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। উপজেলা পর্যায়ে ছোট ছোট ভুল সংশোধন হয়। বেশি চাপ থাকে না। সামান্য বেশি ভুল থাকলে সেগুলো জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সংশোধন করেন। যেগুলো সম্ভব হয় না, সেগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা অনেক সময় অফিসের কাজে ঢাকায় বা বাইরে থাকেন। অনেক সময় অফিসে মিটিংয়ে থাকেন। তখন যোগাযোগ করা যায় না। এসে আবার ফেরত যেতে হয়। আর জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় এনআইডি সংশোধন বা নতুন ভোটার হওয়া যায় না। ফলে একজন নাগরিকের এনআইডি সংশোধন করতে মাসের পর মাস নির্বাচন অফিসে আসা-যাওয়া করতে হয়।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৪৫ হাজারেরও বেশি এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে পাঁচ জেলায় (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি) ২০ হাজার, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছে ২০ হাজারের মতো এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের অধীনে উপজেলা পর্যায়ে ৫-৬ হাজারের মতো এনআইডি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এনআইডি সংশোধনের আবেদন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ঝুলে আছে ৪৪ হাজার ৬২১টি। আর তদন্তসহ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১৩ হাজার ৫৮০টি আবেদন ঝুলে আছে। মোট ৫৮ হাজার ২০১টি আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রবাসীরা বিভিন্ন দেশ থেকে ৮ হাজার ৩৫৭টি আবেদন করেছেন। এগুলোর মধ্যে অনুমোদন হয়েছে ২ হাজার ৯১১টি আবেদন। বাতিল হয়েছে ৭৯টি, তদন্তাধীন রয়েছে ১ হাজার ৪২২টি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বাতিল হয়েছে ৫৪টি আবেদন, অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ১৩টি আবেদন এবং বায়োমেট্রিক তথা আঙুলের ছাপ গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে ৪ হাজার ৯৮টি আবেদনের। এনআইডি সংশোধনের আবেদনগুলো ক, ক ১, খ, খ ১, গ, গ ১ ও ঘ—এ সাতটি ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়। কোনো আবেদন জমা হলে সেগুলোর সমস্যার ধরন বুঝে ক্যাটাগরিতে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। ক্যাটাগরি হয়ে গেলে সে অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট আবেদন নিষ্পত্তি করেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, এনআইডি সংশোধনের চাপ অনেক বেশি। বিভিন্ন ক্যাটাগরির সংশোধনের জন্য প্রতিদিন অজস্র আবেদন জমা হয়। এনআইডি সংশোধনের আবেদন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে হয়। আমার দায়িত্ব চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলার (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি)। আমার কাছে ২০ হাজারের মতো সংশোধনের আবেদন জমা আছে। প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ হাজারের মতো সংশোধন হচ্ছে।
জেএন/এমআর