ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সামনে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক মন্তব্য করায় বিজেপি নেতা তথা প্রবীণ অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে।
গত ৪ ও ৬ নভেম্বর কলকাতার বউবাজার ও বিধাননগর দক্ষিণ থানায় দুটি পৃথক মামলা করেছেন দুই তৃণমূল সমর্থক।
মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ২৭ অক্টোবর কলকাতার সল্ট লেকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র মিলনায়তনে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান সভায় যোগ দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়, এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন অভিনেতা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সূত্র অনুযায়ী, ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর মিঠুন চক্রবর্তী অমিত শাহর সামনেই ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন।
এদিকে বউবাজার থানার মামলার আবেদনকারী নাম প্রকাশ্যে না এলেও বিধানগর থানার আবেদনকারীর নাম জানা গেছে। মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সল্ট লেকের সেক্টর ১-এর বাসিন্দা কৌশিক সাহা।
শুধু তাই নয়, সেই বক্তব্যকে সামনে এনে অভিনেতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আবেদন জানান তিনি।
যদিও বিজেপির স্থানীয় নেতারা জানান, তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বক্তব্যের পাল্টা মন্তব্যে কিছু কথা বলেন মিঠুন চক্রবর্তী।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের লোকসভা নির্বাচনী প্রচারে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, মূলত ওই বিধায়কের দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই কথা বলেছেন মিঠুন চক্রবর্তী।
সোমবার কলকাতার বৌবাজার থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিজেপির একটি সভায় মিঠুনের উসকানিমূলক মন্তব্যের জেরে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যদিও নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযোগকারীর নাম গোপন রাখা হয়েছে।
বিজেপির সেই সভায় মিঠুন বলেছিলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সামনেই বলছি, যা করতে হয় সব করব। এই সব কিছুর মধ্যে অনেক অর্থ লুকিয়ে রয়েছে।
আমাদের এখানকার এক নেতা বলেন, ৭০ শতাংশ মুসলিম, ৩০ শতাংশ হিন্দু। কেটে ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেব। ভাবলাম, মুখ্যমন্ত্রী তাকে কিছু বলবেন। এমন কথা না বলতে বলবেন। কিছু হল না।
আমি মুখ্যমন্ত্রী নই। কিন্তু বলে রাখছি, ভাগীরথী নদী আমাদের মা। তাই ভাগীরথীতে কেটে ভাসিয়ে দেব না। কিন্তু তোমার মাটিতেই তোমাকে পুঁতে দেব!’
কোনও রাখঢাক না করেই প্রবীণ অভিনেতা আরও বলেছিলেন, ‘এমন সদস্য চাই, যারা বুক চিতিয়ে বলবেন, মার! কত গুলি আছে দেখি! এমন কর্মী চাই না, যারা টাকা নিয়ে কাজ করেন। এমন করলে আপনারা তৃণমূলে চলে যান।
আমি বলে যাচ্ছি, আপনারা আমাদের বাগানের একটা ফল যদি ছেঁড়েন, আমরা চারটে ছিঁড়ব। এটা সত্যি। নইলে জিততে পারব না।’
ভোটারদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম সংক্রান্ত মন্তব্য করে প্রবীণ অভিনেতা বলেছিলেন, ‘এটা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী বলছে না। ১৯৬৮ সালের ২৮ বছর বয়সি মিঠুন বলছে। রাজনীতি করেছি। রক্তের রাজনীতি করেছি। সব জানি, কে কোথা থেকে কী করবে। আপনাদের পাশে চাই। সাহস চাই। বুক চিতিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’
মিঠুনের এই মন্তব্যের জেরেই ওই এফআইআর দায়ের হয়েছে। সিনেমার পর্দায় মিঠুনের মারকাটারি সংলাপ দশকের পর দশক দর্শকদের বিনোদন দিয়েছে। কিন্তু বাস্তব জীবনেও সেই ধরনের সংলাপ সম্বলিত রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।
জেএন/পিআর